নোমান সাবিত: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একজন বাংলাদেশিকে অপহরণের পর যে পরিমাণ অর্থ দাবি করেছিলেন অপহরণকারীরা আসামীকে ধরতে ঠিক একই পরিমাণ পুরুস্কারও ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। উক্ত মামলার সর্বশেষ আসামি রুহেল চৌধুরী (৩৪) কে ধরতে ২০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে এফবিআই। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরে চাঞ্চল্যকর এ অপহরণ মামলার সর্বশেষ আসামিকে ধরতে গত শুক্রবার (১ মার্চ) ওয়েব সাইটে পোষ্টার প্রকাশ করেন এফবিআই। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের দাবির সমান এফবিআইয়ের পুরুস্কারের অর্থ হওয়ায় বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে মামলার বাদীর বাড়িতে বোমা মারার হুমকিসহ আদালত অবমাননার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের নামে হুলিয়া (পলাতক আসামিকে হাজিরের নোটিশ) জারি করে নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ইলিয়াসকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তার বাড়ির দরজা ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ‘ধরিয়ে দিন’ পোস্টার লাগিয়েছিল।
গত ১০ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশিকে অপহরণ মামলার ৬ আসামীকে গ্রেপ্তারের পর একই মামলার সর্বশেষ আসামি রুহেল চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে শুক্রবার ২০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেন এফবিআই। তার বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কে দুজনকে অপহরণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন এবং মুক্তিপণের জন্য হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের দাবির সমান এফবিআইয়ের পুরুস্কারের অর্থ হওয়ায় বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিকে অপহরণের অভিযোগে অপহরণকারী চক্রের ছয় বাংলাদেশি সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ফেডারেল আদালত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ, মারধর ও যৌন নিপীড়ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আইনজীবিরা জানিয়েছেন। তারা সকলেই নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর জামাইকায় অধিবাসী।
গত বছরের ২৭ মার্চ জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের কাছে ১৮১তম প্রিসেন্ট থেকে এ অপহরণকারীরা এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়। এ মামলার গ্রেপ্তার হওয়া ৬ আসামীকে গত ১০ জানুয়ারি আদালত অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ইউনাইটেড ষ্টেটস এটর্নীর অফিস থেকে মিডিয়া অফিসগুলোতে প্রেরীত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন-সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), শাহেদ আলম (২৯), আবু চৌধুরী (২৮), আনজু খান (২৮), সুলতানা রাজিয়া (৩৮) ও ইফফাত লুবনা (২৪)। এদের মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী।

আদালতের নথিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে এ ছয় জনের বিরুদ্ধেই। আর আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। আসামি রুহেল চৌধুরী এখনও পলাতক রয়েছেন। গত বছর কুইন্সের রাস্তা থেকে দু’জনকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সাতজন সন্দেহভাজনের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী রুহেল চৌধুরী হচ্ছে শেষ ব্যক্তি।
এফবিআইয়ের তথ্য অনুসারে, ৩৪ বছর বয়সী আবু চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ২৪ বছর বয়সী ইফফাত লুবনাসহ আরও ছয়জন ষড়যন্ত্রকারীকে গত বছর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, গত বছরের ২৭ মার্চ জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের কাছে ১৮১তম সেন্ট থেকে অপহরণকারীরা প্রথম এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়। রুহেল চৌধুরী ব্যবহৃত গাড়ির ব্যবসা করেন এবং তার সরবরাহ করা একটি হোন্ডা এসইউভিতে জোর করে ভুক্তভোগীকে তুলে নেন আবু চৌধুরী। পরে আবু চৌধুরী ভুক্তভোগীকে গাড়ির মধ্যে মারধর করেন এবং রুহেল চৌধুরী এসময় নিজেই ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলেও জানিয়েছেন প্রসিকিউটররা।
প্রসিকিউটররা বলছেন, সন্দেহভাজন সৈয়দ রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান এবং সুলতানা রাজিয়াকে সঙ্গে নিয়ে রুহেল চৌধুরী সারারাত ভিকটিমকে মারধর করার পাশাপাশি হুমকিও দেন।
এফবিআই জানায়, অভিযুক্ত লুবনা গত বছরের ১১ মে কুইন্সের উডসাইডে একটি রেস্তোরাঁয় দ্বিতীয় এক ভুক্তভোগীকে ডেকে আনে। ফেডারেল তদন্তকারীরা বলছেন, সেখানে লুবনার স্বামী লোকটিকে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং তাকে একটি মিনিভ্যানে জোর করে নিয়ে যায়। এই গাড়িটিও রুহেল চৌধুরী সরবরাহ করেছিলেন এবং তিনি নিজেই সেটি চালাচ্ছিলেন। পরে রুহেল চৌধুরী ভিকটিমকে একটি হোটেলে নিয়ে গেলে তার সহযোগীরা ভিকটিমকে মারধর করে। এছাড়া হোটেলে আবু চৌধুরী ওই ব্যক্তিকে যৌন হয়রানি করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন প্রসিকিউটররা।
অপহরণের এক পর্যায়ে আবু চৌধুরী ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে ২০ হাজার মার্কিন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। তদন্তকারীর অভিযোগ, ফোন কলের সময় আবু চৌধুরী টেলিফোনের মাধ্যমে তার চিৎকার যেন শোনা যায়, তা নিশ্চিত করতে ভিকটিমকে প্রচণ্ড মারধর করেন। গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম কথিত অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন আবু চৌধুরী ও ইফফাত লুবনা।
আর এফবিআইয়ের নোটিশে রুহেল চৌধুরীকে বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করে কুইন্সের হলিস, কুইন্স ভিলেজ এবং জ্যামাইকা এলাকায় তার যাতায়াত রয়েছে বলে জানানো হয়। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, ওজন ১৫০ পাউন্ড এবং চোখের রঙ বাদামী বলেও জানানো হয়েছে। কেউ তাকে দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্থানীয় এফবিআই অফিস বা নিকটস্থ আমেরিকান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এফবিআই ও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ডিটেকটিভ শাখার অফিসারগণের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয়েন্ট ভায়োলেন্ট টাস্ক ফোর্স’ দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন প্রদান করেন।
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]