১৪ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশিদের আশ্রয় দিতে হিমশিম খাচ্ছে কানাডা

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
বাংলাদেশিদের আশ্রয় দিতে হিমশিম খাচ্ছে কানাডা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি কানাডার কুইবেকে বাংলাদেশিদের আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যে হারে আবেদন বাড়ছে তাতে এ বছর কানাডার মোট আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। কানাডীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এসব আশ্রয়প্রার্থীদেরই একজন মারজানা জান্নাত রাহী। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাবা-মা এবং ভাইবোনদের সঙ্গে মন্ট্রিলে এসেছিলেন। এখন তিনি নিরাপত্তার জন্য দেশটিতে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। তিনি কানাডার গ্লোবাল নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু কিছু রাজনীতিবিদ বা দুর্বৃত্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আমার বাবাকে আক্রমণ করে। এ ছাড়া তারা আমাদের ওপরও আক্রমণ করেছে।’ ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডার (আইআরসিসি) তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ২ হাজার ৮৬৫ জন বাঙালি শুধু কুইবেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০৯-এর কম। বর্তমান হারে আবেদন পড়তে থাকলে বছরের শেষ নাগাদ প্রদেশটিতে আশ্রয়প্রার্থী পাঁচ হাজারের বেশি হতে পারে। আইআরসিসির তথ্যমতে, এ বছর কানাডার মোট আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন মন্ট্রিলে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক আবিদ বাহার। তিনি বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর দৃষ্টিতে, বাংলাদেশিদের দেশত্যাগ তাঁর কাছে বিস্ময়কর কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘কারণ নিপীড়ন আরও বেশি হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলো মানুষে পরিপূর্ণ, অনেক জ্যাম। তাই তাঁরা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন।’ গ্লোবাল নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই সময়ে ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী মারাত্মক দমন-পীড়ন চালিয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। মন্ট্রিলে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা কয়েক দিন ধরে প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখা নিয়ে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ও পরবর্তীতে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। এরপর থেকে সেই নীতি বাতিল করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। মন্ট্রিলের মারিয়ানোপোলিস কলেজের ইতিহাস এবং দক্ষিণ এশীয় গবেষণার অধ্যাপক ডলোরেস চিউ বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁর মতো বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিল হয়ে উঠছে। অধ্যাপক ডলোরেস চিউ বলেন, বাংলাদেশের একটি বৃহৎ জনসংখ্যা বেকার বা কর্মহীন। তাঁদের অধিকাংশই তরুণ। পেটের দায়ে পড়েই তাঁরা রাজপথে নেমেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ভালো করলেও কোভিড-১৯-এর পরে পোশাকশিল্পে ধস নামা শুরু হয়। এর পর থেকেই সবকিছু আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। এরপরে ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দামও বেড়েছে। চিউয়ের মতে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ সরকারব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়েছে। কারণ তাঁরা মনে করে, গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না।’ সর্বোপরি, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে সামনের দিনগুলোতে কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন মন্ট্রিলে বসবাসরত বা বাংলাদেশিরা। বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন