বাংলাপ্রেস ডেস্ক: বিগত কয়েক বছরে কোমল পানীয় পানের প্রবণতা অনেক বেড়েছে। অনেকেই খাবারের সঙ্গে ঠাণ্ডা পানীয় পান করছেন। আবার কিছু মানুষ আছেন, যারা ঠাণ্ডা পানীয় ছাড়া খাবারও খেতে পারেন না। কিন্তু আপনি কি জানেন, ঠাণ্ডা পানীয় পান করার ফলে আপনার শরীরে কী ঘটে?
এক ক্যান ঠাণ্ডা পানীয় পান করলে প্রায় ১০ চা চামচ চিনি শরীরে প্রবেশ করে এবং এটি ঠাণ্ডা পানীয় পান করার মাত্র ২০ মিনিট পরে শুরু হয়।এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৪০ মিনিট পর শরীর ঠাণ্ডা পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন শোষণ করে, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং লিভার রক্তে আরো চিনি ছেড়ে দিতে শুরু করে। ডোপামিনের বর্ধিত মাত্রা মস্তিষ্কের সুখী কেন্দ্রগুলোকে উদ্দীপিত করে।
৬০ মিনিট পর ফসফরিক এসিড পাকস্থলীতে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থকে আবদ্ধ করে।অন্যদিকে ক্যাফেইনের মূত্রবর্ধক প্রভাব প্রস্রাবের মাধ্যমে এগুলো নির্গত করতে শুরু করে। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন, এই জিনিসগুলো শুধু চিনিযুক্ত সোডা দিয়েই দেখা যায় এবং ডায়েট সোডা পান করলে আপনাকে এই জিনিসগুলোর মুখোমুখি হতে হবে না, তাহলে আপনার ধারণা ভুল।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, যারা প্রতিদিন এক বা একাধিক ডায়েট সোডা খান তাদের স্ট্রোক ও আলঝেইমার্সের ঝুঁকি ৩ গুণ বেশি থাকে।৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ২,৮০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে ১০ বছর ধরে এই গবেষণায় অনুসরণ করা হয়েছিল।এর ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন এক বা একাধিক ডায়েট সোডা পান করেন তাদের ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি ২.৯৬ গুণ এবং আলঝেইমার্সের ঝুঁকি ২.৮৯ গুণ বেড়ে যায়।
১.২ এর ঝুঁকি অনুপাত মানে হলো ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর রেফারেন্স গোষ্ঠীর তুলনায় কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি। এই গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, ডায়েট সোডা সেবন কেবল চিনিযুক্ত সোডার মতোই ক্ষতিকারক হতে পারে না, বরং এর নিজস্ব ঝুঁকিও থাকতে পারে।গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন কোমল পানীয় পান করেন তাদের স্ট্রোক ও আলঝাইমার্সের ঝুঁকি যারা খুব কমই পান করেন তাদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। তবে, এটি কেবল একটি সম্পর্ক, সরাসরি কারণ নয়।গবেষণায় অবশেষে দেখা গেছে, কৃত্রিমভাবে মিষ্টিযুক্ত কোমল পানীয় গ্রহণ স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত।
কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর প্রভাব
কোমল পানীয় গ্রহণের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্পর্ক রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
- স্থূলতা : প্রতিদিন সোডা পান করলে স্থূলতার ঝুঁকি ১.৬ গুণ বেড়ে যায়।
- হৃদরোগ : প্রতিদিন একটি ক্যান পান করলে ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস : যারা প্রতিদিন ১ বা ২ ক্যান পান করেন তাদের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেশি।
- দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় : চিনি ও অ্যাসিডের কারণে।
কিডনির ক্ষতি : সোডিয়াম ও ফসফরিক এসিডের কারণে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিডনি ও হাড়ের ক্ষতি করতে পারে।
জাপানে ফেলা দুই পারমাণবিক বোমার নাম ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাট ম্যান’ রাখা হয় কেন প্রতিদিন এক ক্যান কোমল পানীয় পান করলে কেবল আপনার দাঁতেরই ক্ষতি হতে পারে না, বরং এটি মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে স্থূলতাও বাড়াতে পারে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি>টিডি
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]