১৪ অক্টোবর ২০২৫

ডাক্তার নন, ত্রিশ টাকার চক্ষু চিকিৎসা সেবা নেন ১৫০০ টাকা!

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
ডাক্তার নন, ত্রিশ টাকার চক্ষু চিকিৎসা সেবা নেন ১৫০০ টাকা!

আব্দুল মালেক নিরব, লক্ষ্মীপুর থেকে : তিনি ডাক্তার নন, নেই ডাক্তারী সনদপত্র, লক্ষ্মীপুর গণকল্যাণ প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে গাজী জাহাঙ্গির হোসেন নামে এক ব্যক্তি ডাক্তার সেজেই দিচ্ছেন চক্ষু চিকিৎসা। ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে ত্রিশ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবার বিধান থাকলেও তিনি প্রতারনার মাধ্যমে রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন ১৫শ থেকে তিন হাজার টাকা।

জানা যায়, ঢাকাস্থ গণ কল্যাণ মেডিকেল ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা হতদরিদ্রদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরের হাসপাতাল রোডস্থ নিউ আধুনিক হাসপাতাল সংলগ্নে গণ কল্যাণ প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র নামে শাখা খোলা হয়। এতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চক্ষু রুগিদের ত্রিশ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ দেওয়া হয়। এতে কো-অর্ডিনেটর’র দায়িত্বে রয়েছেন গাজী জাহাঙ্গির হোসেন। কিন্তু তিনি নিজেই ডাক্তার সেজে রোগিদের দিচ্ছেন চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র। চক্ষু অপরেশনের নামে প্রতারণা করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

এদিকে বুধবার (২১ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর এলাকার ৫ বছর বয়সী কণ্যাশিশু মামুনা’র চোখে ধান পড়ে সমস্যা দেখা দিলে গণকল্যাণ চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন মা নাজমা বেগম। এসময় গাজী জাহাঙ্গির চিকিৎস্যা কেন্দ্রে বসে অপরেশনের বিভিন্ন নাটক সাজায়। এক পযায়ে ব্যবস্থাপত্র ধরি দিয়ে তাদের কাছ থেকে ১৫শ টাকা হাতিয়ে নেন।

ভূক্তভোগী নাজমা বেগম বলেন, সামান্য চোখের ভিতরে লাল দেখা দিলে ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে নি। কিন্তু ডাক্তার বিভিন্ন অপরেশনের কথা বলে ১৫শ টাকা নেয়। মেয়ের চোখের কথা চিন্তা করেই বাধ্য হয়েই টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেই। কিন্তু ওইখান থেকে কোন ঔষধই দেয়নি। ভূক্তভোগী ও স্থানীয়রা অভিয়োগ করে বলেন, জাহাঙ্গির চক্ষু ডাক্তার নন, তার কোন ডাক্তারি সনদপত্রও নেই। ওই চিকিৎসা কেন্দ্রকে ব্যক্তিগত চেম্বার বানিয়ে তিনি রোগী দেখেন গভীর রাত পর্যন্ত। আর এ সময় রোগীদের দূর্বলতার সুযোগে চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপত্র ব্যবহার করেই প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউই কিছু বলে না। অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ স্বীকার করে দাপট দেখিয়ে গাজী জাহাঙ্গির বলেন, ২টার পরে চিকিৎসা নিতে আসলে টাকাপয়সা দিতে হবে। নিজের ডাক্তারি কোন সনদ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যারামেডিকেল কোস করেছি। আর সনদ দেখিয়ে কি হবে। আপনি যা করার করেন। এতে কিছু যায় আসে না। আমার সাথে এ শহরের নামি-দামি কর্তাব্যক্তি সবার সম্পর্ক আছে।

তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ বলেন, প্যারামেডিকেল কোর্স করা কেউ ডাক্তার পরিচয় দিতে পারবে না। ব্যবস্থাপত্রও লিখারও অনুমোতি নেই। এটা প্রতারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। খোজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেন, ত্রিশ টাকা চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বিষয়টি দূঃখজনক। খোজ খবর নিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাপ্রেস/আর এল

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন