নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উদ্যাপন করা হয়। স্থানীয় সময় রোববার (১৭ মার্চ) জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এর পর জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ জাতির পিতার ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কাটা হয়।
দিবসটি পালনের অংশ হিসেবে এক উৎসবমূখর পরিবেশে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী শিশু-কিশোরদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দিনব্যপী শিশু-কিশোর আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়। শিশু-কিশোর আনন্দমেলায় আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিশু-কিশোরেরা বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের গ্রামীন দৃশ্য ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে “বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ” বিষয়ে শিশু কিশোরদের জন্য বয়সভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এসকল প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিকেরও বেশী শিশু কিশোর অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বক্তব্য প্রদান করেন এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপনে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত, তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং নিপীড়িত-বঞ্চিত শোষিত মানুষের অধিকার আদায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও নেতৃত্বের বিষয়সমূহ বিস্তারিত বর্ননা করেন। তিনি এ বছরের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য – ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনবো হাসি সবার ঘরে’ -এর উপর আলোকপাত করে বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম স্নেহ ও ভালোবাসা এবং বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন শিশুদের সঠিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ সোনার বাংলা গড়ে তোলার অন্যতম চাবি কাঠি। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে পরবর্তীতে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শিশুদের উন্নয়ন ও সমান অধিকার রক্ষায় যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং বর্তমান প্রজন্মকে স্মার্ট, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলছেন। এসময় তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগ ও সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা একটি চলমান দর্শন এবং এই সোনার বাংলা দর্শনের ধারাবাহিকতার একটি অংশ হলো আজকের স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগ। রাষ্ট্রদূত মুহিত আরও বলেন জাতিসংঘে শিশু সনদ গৃহীত হওয়ার প্রায় ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেন। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম স্নেহ ও ভালোবাসাকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৭ সাল হতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি ফিলিস্তিনে হাজার হাজার শিশুর উপর ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য বাংলাদেশ কাজ করে যাবে বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিতের বক্তব্যের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ এবং নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল মোঃ নাজমুল হুদা অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বসবাসরত শিশু-কিশোরগণ ও তাদের অভিভাবকগণ, স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ এবং স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের সন্তান ও পরিবারের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশীগণ ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন এবং সার্বিক আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দুতাবাসে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উদযাপিত হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার (১৭ মার্চ) দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে দূতাবাস বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনাসভা, শিশুদের জন্য রচনা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সকালে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান কর্তৃক দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাষ্ট্রদূত মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতার আবক্ষ প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে মিনিস্টার (কনস্যুলার) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মিনিস্টার (কর্মাস) মোঃ সেলিম রেজা এবং মিনিস্টার (ইকোনমিক) ড. মোঃ ফজলে রাব্বি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ইমরান স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বাঙালি জাতির বহুল প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বঙ্গবন্ধুকে একজন আপোষহীন ও নির্ভীক নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, মহান নেতার জীবন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে জাতিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে এবং বিশ্বে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মই হবে প্রধান চালিকা শক্তি। রাষ্ট্রদূত ইমরান বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্বাধীনতা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর মহান আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা শিশুদের সামনে তুলে ধরার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেন।
জাতীয় শিশু দিবস প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইমরান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন আলোচনায় অংশ নেন এবং জাতির বহুল প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পূনর্গঠনে তার অসামান্য অবদানের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে সকালের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
পরবর্তীতে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে কেক কাটেন এবং রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। দূতাবাসের এই দুই পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিলটন ও ফার্স্ট সেক্রেটারি আতাউর রহমান।
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]