
ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: আওয়ামী লীগের অনেক টাকা আছে। ওই টাকা খরচ করে তারা আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চায়। ঝটিকা মিছিলে অংশ নিলেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতারা এসব স্বীকারও করেছে। তাই এ বিষয়ে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি সোমবার বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এসব বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন। এই নির্বাচনে শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাইকে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। মনে যাই থাকুক না কেন, যে দলকেই সমর্থন করি না কেন সেটা প্রকাশ করা যাবে না। নির্বাচনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শুরু করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মনিটরিং শুরু করেছে ডিএমপির সদর দপ্তর। যথাসময়ে জিডির তদন্ত শুরু না করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশনার জানান, গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল প্রহসনের। গত তিনটি নির্বাচনকে আসলে নির্বাচন বলা যায় না। তাই এবার সেরা নির্বাচন উপহার দিতে হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ডিএমপির প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে নির্বাচনে শতভাগ কাজে লাগাতে হবে। গত কিছুদিন ধরে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা ভালো। অপরাধ পরিস্থিতি ভালো। এটাকে ধরে রাখতে হবে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের ওপর দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে কমিশনার বলেন, ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতির সময় সম্প্রতি ২৪৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের পর ঝটিকা মিছিল কমে গেছে। কিন্তু তৎপরতা থেমে নেই বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের। নির্বাচন ভণ্ডুলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে পারে। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা নানা নির্দেশনা দিচ্ছে। তারা যাতে কোনোভাবেই সফল না হতে পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হবে। এখন ক্রিটিক্যাল সময় চলছে। এসব সময় পার করতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সভা শেষে সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ডিএমপির অনেকগুলো গাড়ি নষ্ট হয়েছে। সেগুলোর বিপরীতে ২০টি গাড়ি মঞ্জুর করা হয়েছে। ২০টি গাড়ি হাতে পেয়েছি। বাকিগুলো শিগগিরই হাতে পাব। আশা করি, এসব গাড়ি আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। তিনি বলেন, আরও গাড়ি দরকার। ডিএমপির থানাগুলোতে অন্তত ২০টি করে গাড়ি থাকা দরকার। সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, নগরবাসীর মধ্যে নিরাপত্তাবোধ বাড়াতে টহল কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) সরওয়ার (অতিরিক্ত আইজি) বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তিনি বলেন, সেবাপ্রত্যাশীদের কথা বিবেচনা করে থানা ভবনগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় করা মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দ্রুততম সময়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ফিন্যান্স, লজিস্টিকস ও প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জিললুর রহমান, আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউল হক, সব যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ কমিশনার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। সেপ্টেম্বর-২০২৫ মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে উত্তরা বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে গুলশান থানা। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন পল্লবী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদ হোসেন। শ্রেষ্ঠ এসআই যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন গুলশান থানার এসআই মো. আলীম হোসাইন ও মুগদা থানার এসআই তহিদুল ইসলাম। এএসআইদের মধ্যে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই আখতারুজ্জামান মন্ডল পলাশ ও গুলশান থানার এএসআই মো. তন্ময় ডিউ।
গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে ডিবি-মতিঝিল বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন ডিবি-মতিঝিল বিভাগের গাড়ি চুরি উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসাইন। ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে ট্রাফিক-মতিঝিল বিভাগ। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন রামপুরা ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট আব্দুল আজিজ ও মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট রাসেল আলম।
বিপি>টিডি
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন



.jpg)

