১৫ অক্টোবর ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে বরখাস্তের কথা শুনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
লক্ষ্মীপুরে বরখাস্তের কথা শুনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু

সুলতানা মাসুমা,লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ বরখাস্তের কথা শুনার পরে হৃদ ক্রিয়াবন্ধ হয়ে মারাযান। আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্ব চররুহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনার মিথ্যা অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ কে বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মুনসুর আলী চৌধুরী । এ খবর শুনে হৃদ্‌ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ওই শিক্ষক।

এলাকাবাসী জানান, শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২৬ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মাষ্টার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর গত ২১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে যান তিনি। তখন সরকারি বিধিনিষেধ মেনে বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা হচ্ছিল।

উক্ত সমাবেশকে সংবর্ধনা সভা বানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুনছুর আলী চৌধুরী সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ২৫ জানুয়ারি একটি অভিযোগ নিতে বলে। পরে তা তদন্ত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে কোনো শোকজ নোটিশ না দিয়ে ২৭ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে যান উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ। ওই দিনেই বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ। পরদিন পরিবারের সদস্যরা প্রধান শিক্ষককে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান। এরই মধ্যে দুই কার্যদিবসের মধ্যে সোমবার বিকেলে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ খবর শুনে রাত ৮টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। সাময়িক বরখাস্ত করার সময় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মুনসুর আলী চৌধুরী। নিহত ব্যক্তির বড় ছেলে জামিল মাহমুদ বলেন, ‘তার বাবা কে আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ না দিয়ে মিথ্যা কে সত্য বানিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবেদন তৈরি করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে । আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাইস অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবাকে মানসিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। যেন এভাবে আর কোনো বাবাকে হারাতে না হয়।’

জান্নাতুল ফেরদাইস আরও বলেন, ‘উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন অফিসে আমার বড় বোনকে ডেকে নিয়ে জোর করে বাবার বরখাস্তের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে বিষয়টিও জানাতে বাধ্য করেন। দুই দিনের মধ্যে তড়িঘড়ি ও কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে এ শাস্তি দিয়ে আমার বাবা কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

জানা যায়, এর আগেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মানসিক নির্যাতনে আরও দুই শিক্ষক হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে একইভাবে মারা যান। ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক বিচারের দাবি জানান প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ ও এলাকা বাসি।

এই দিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ার হোসেন মোর্শেদের বিরুদ্ধে তাঁর সহকর্মীরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছেন। সে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুনছুর আলী চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি দুঃখজনক বলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এ ছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালীন চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

বিপি/কেজে

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন