নোমান সাবিত: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের পটভূমিতে নির্মিত বিতর্কিত ডকুমেন্টারি 'নো আদার ল্যান্ড' এবার অস্কারে সেরা ডকুমেন্টারি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নির্মাতাদের যৌথভাবে তৈরি এই ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ফিলিস্তিনি কর্মীরা নিজেদের গ্রাম রক্ষার জন্য লড়াই করছেন, যেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। স্থানীয় সময় রবিবার (২ মার্চ) সেরা ডকুমেন্টারি বিভাগে এ অস্কার জেতেন।
ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের যৌথ এই প্রজেক্টে দেখানো হয়েছে অ্যাক্টিভিস্ট বাসেল আদরাকে, যিনি গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে নিজের শহর ধ্বংসের ঘটনা ক্যামেরায় ধারণ করেন। ইসরায়েলি সেনারা তার শহরটিকে সামরিক প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পুরো এলাকা গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল,পশ্চিম তীরের দক্ষিণ প্রান্তে। আদরার বারবার আবেদন কেউ কানে তোলে না, যতক্ষণ না তিনি এক ইহুদি ইসরায়েলি সাংবাদিকের সাথে বন্ধুত্ব করেন, তিনি আদরার গল্পটি আরও বড় পরিসরে তুলে ধরতে সাহায্য করেন।
আদরা বলেন প্রায় দুই মাস আগে আমি বাবা হয়েছি। আর আমার একটাই আশা আমার মেয়ে যেন এই একই জীবন যাপন করতে না হয়, যেখানে সব সময় বসতি স্থাপনকারীদের হামলা, সহিংসতা, বাড়িঘর ধ্বংস আর জোরপূর্বক উচ্ছেদের ভয় নিয়ে বাঁচতে হয়।
'নো আদার ল্যান্ড' ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে দারুণ সাফল্যের পর অস্কারের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে আলোচনায় ছিল। তবে, এটি এখনও কোনো মার্কিন পরিবেশক পায়নি যদিও ২৪টি দেশে পরিবেশনার জন্য চুক্তি হয়েছে। অস্কারে এটি হারিয়ে দেয় 'পোর্সেলিন ওয়ার,' 'সুগারকেন,' 'ব্ল্যাক বক্স ডায়েরিজ' এবং সাউন্ডট্র্যাক টু আ কু দেতা'-কে।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চার বছর ধরে এই ডকুমেন্টারির শুটিং হয়। চূড়ান্ত শুটিং শেষ হয় হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর ইসরায়েলে হামলার ঠিক কয়েকদিন আগে, যা গাজা যুদ্ধের সূচনা করে।
এই ছবিতে ইসরায়েলি সাংবাদিক যুবাল আব্রাহামকে দেখা যায় এমন এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে থাকতে, যারা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে, কিছু ফিলিস্তিনি আব্রাহামের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন, তার ইসরায়েলি নাগরিকত্বের কারণে যে বিশেষ সুবিধাগুলো তিনি পান, তা নিয়ে। আদরা বলেন, তিনি পশ্চিম তীর ছেড়ে যেতে পারেন না, তাকে অপরাধীর মতো আচরণ করা হয়, অথচ আব্রাহাম অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন।
ডকুমেন্টারির বেশিরভাগই আদরার ব্যক্তিগত আর্কাইভ থেকে নেওয়া হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা ফুটেজ। তাতে দেখা যায়, ইসরায়েলি সৈন্যরা গ্রামের স্কুল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি পানি কূপগুলোতে সিমেন্ট ভরাট করে দিচ্ছে, যাতে কেউ আবার তা ব্যবহার করতে না পারে।
ছোট, পাথুরে এলাকা মাসাফের ইয়াত্তার বাসিন্দারা একজোট হয়, যখন আদরা একজন ইসরায়েলি সৈন্যকে দেখেন যিনি বাড়ি ধ্বংসের প্রতিবাদ করা এক স্থানীয় ব্যক্তিকে গুলি করেন। ওই ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন, আর তার মা তাকে পাহাড়ি গুহায় রেখে যত্ন নেন।
পুরস্কার জয়ের পর ডকুমেন্টারির প্রধান চরিত্র ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট বাসেল আদরা বলেন, 'আমি চাই না আমার মেয়ে এমন একটা জীবনে বড় হোক যেখানে সব সময় সহিংসতা, বাড়িঘর ধ্বংস আর উচ্ছেদের আতঙ্কে থাকতে হবে।
চার বছর ধরে শুটিং করা এই ডকুমেন্টারি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হলেও, এর রাজনৈতিক বার্তা এবং ইসরায়েলি সরকারের সমালোচনা করার কারণে এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতা ও মানবিক সংকট তুলে ধরার কারণে 'নো আদার ল্যান্ড' অস্কারের মঞ্চেও ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]