
মিসরে ট্রাম্পের ‘শান্তি’ সম্মেলনে থাকছে না হামাস-ইসরায়েল


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে মিসরে আলোচনায় বসছেন বিশ্বনেতারা। ট্রাম্পসহ ২০টির বেশি দেশের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস কিংবা ইসরায়েল সরকারের কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে থাকছেন না। এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী বন্দিবিনিময়ে তোড়জোড় শুরু করেছে হামাস ও ইসরায়েল।
ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী গত শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। এর চতুর্থ দিনে সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ‘শান্তি’ সম্মেলনে বসছেন বিশ্বনেতারা। সেখানে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ইতিমধ্যে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তাতে ট্রাম্প স্বাক্ষর করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে সোমবার প্রথমে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন ট্রাম্প। তারপর মিসরের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। মিসর সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটিতে আয়োজিত সম্মেলনের লক্ষ্য হলো গাজায় সংঘাত শেষ করা। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রচেষ্টা জোরদার করা; একই সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তার নতুন এক যুগে প্রবেশ করা।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। এ ছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অংশ নিতে পারেন সম্মেলনে।
সম্মেলনে ইসরায়েলের সরকারের কেউ থাকছেন না, সেটা নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান। তিনি গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, মিসরের সম্মেলনে ইসরায়েলের কোনো কর্মকর্তা যোগ দেবেন না।
আর ফিলিস্তিনি একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজায় সংঘাত নিয়ে আলোচনা হলেও হামাসের কোনো নেতা সম্মেলনে থাকবেন না। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া হামাসের প্রতিনিধিদলের প্রধান খলিল আল-হায়াসহ বেশির ভাগ সদস্য গত শনিবার শারম আল শেখ ছেড়েছেন।
ভোরে বন্দিবিনিময় শুরু
ট্রাম্পের পরিকল্পনার ভিত্তিতে গাজায় যে প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তার মূল শর্তগুলো হলো গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা বন্ধ, উপত্যকাটির নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সেনা সরিয়ে আনা এবং বন্দিবিনিময়। গতকাল দিনভর বন্দীদের মুক্তি বিষয়ে তৎপরতা চালিয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। এদিন নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত নিতে প্রস্তুত তাঁরা।
নেতানিয়াহুর মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান তেলআবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সোমবার ভোরে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে হামাস। জীবিত জিম্মিদের রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের রেইম সেনাঘাঁটিতে নেওয়া হবে। আর মৃত জিম্মিদের মরদেহ ইসরায়েলের পতাকাযুক্ত কফিনে করে ফেরত আনা হবে। তারপর মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হবে।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। পরে সেদিন থেকেই গাজায় টানা দুই বছর ধরে নৃশংসতা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ৭ অক্টোবর হামাসের সদস্যরা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান। তাঁদের ৪৮ জন এখনো উপত্যকাটিতে রয়েছেন। এই জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত। বাকি ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। তাঁদের ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। বন্দীদের মধ্যে ২২ শিশুও রয়েছে। গতকাল ইসরায়েল জানায়, এই বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য ওফের ও কেৎজিয়ত কারাগারে নেওয়া হয়েছে। বন্দীদের মুক্তি উদ্যাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে তাঁদের পরিবারকে।
হাসপাতালে আরও ১২৪ মরদেহগাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও বেড়েই চলেছে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা। কিছু এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা সরে যাওয়ার পর সেখানে উদ্ধারকাজ চালিয়ে পাওয়া যাচ্ছে মরদেহ। গতকাল ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ১২৪ জনের মরদেহ গাজার হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১৭টি ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৭ হাজার ৮০৬ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেল। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। আর অনাহারে মারা গেছেন অন্তত ৪৬০ জন। তবে যুদ্ধবিরতির পর গতকাল ত্রাণের বেশ কিছু ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।এদিকে যুদ্ধবিরতির পর গতকালও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ এলাকায় ফিরেছেন। তবে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। এমনই একজন রামি মোহাম্মদ আলী। সন্তানকে নিয়ে ১৫ কিলোমিটার হেঁটে উপত্যকার উত্তরে গাজা নগরীতে পৌঁছেছেন তিনি। রামি বলেন, ধ্বংসের যে মাত্রা তিনি দেখছেন, তা বিশ্বাস করার মতো নয়। এতে নিজ ঠিকানায় ফেরার খুশি মলিন হয়ে যাচ্ছে।
বিপি>টিডি
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





