১৫ অক্টোবর ২০২৫

মনোহরদী সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
মনোহরদী সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর মনোহরদী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও টেকনিশিয়ান থাকলেও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় সরকারী হাসপাতালের গেটের পাশের বেসরকারি হাসপাতালে। এমনটি মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিত্যদিনের ঘটনা। আর এই অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন এই হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোনামিন জেমী। রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার, অফিস সময়ে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখা, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসক মোনামিন জেমী দীর্ঘদিন ধরে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গড়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারগুলোর সাথেও তার সখ্যতা গড়ে উঠে। বিশেষ করে লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে তিনি অনেকটা অলিখিত চুক্তিবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। সরকারী হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তার কাছে গেলেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দালালের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে। এভাবে দৈনিক সাত-আটজন রোগী ওই প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে লাইনে দাঁড়ানো অন্যান্য রোগী না দেখেই তিনি বেরিয়ে যান ওই প্রাইভেট চেম্বারে। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে গলাকাটা শুরু করেন নিরীহ রোগীদের। তার নির্ধারিত প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষা না করালে রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। অনেক সময় রাগান্বিত হয়ে ব্যবস্থাপত্র ছুঁড়ে ফেলার ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, ডাক্তার মোনামিন জেমীর বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় সরকারী নিয়মনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার এসব অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক করলেও তিনি এসবের তোয়াক্কাই করছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেন তার কাছে অসহায়। উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের ভুক্তভোগী রিমা বেগম বলেন, গত ১৯ জুন আমার মায়ের পেট ব্যথা শুরু হলে সকাল সাড়ে ১০ টায় মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে ১০১ নম্বর কক্ষে ডাক্তার মোনামিন জেমীর কাছে যাই। ডাক্তার আমার মাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই একটি পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে দালালের মাধ্যমে হাসপাতালের উত্তর পাশে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে যাওয়ার ২০ মিনিট পর ডাক্তার এসে মায়ের আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন আল্ট্রাসনো গ্রামের পর ডাক্তারের নিজস্ব প্যাডে ব্যবস্থাপত্র করেন। পরে পরীক্ষা বাবদ পাঁচশ টাকা এবং ডাক্তার ফি বাবদ আরো পাঁচশ টাকা নেয়া হয়। চারদিন পরও মায়ের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৩ জুন সকাল ১১ টায় আবারো মাকে নিয়ে জরুরী বিভাগে ডাক্তার মোনামিন জেমীর কাছে আসি। সেদিনও একই কায়দায় প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য ওই প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। যদিও এসব পরীক্ষা সরকারী হাসপাতালেই করা হয়ে থাকে। প্রস্রাব পরীক্ষার পর কাগজপত্র ও মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে পুণরায় জরুরী বিভাগে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং আমাদেরকে ওই প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বলেন। আমার কাছে টাকা না থাকায় এখানেই মাকে দেখার অনুরোধ করলে তিনি কোন প্রকার কারণ ছাড়াই আমাকে গালমন্দ করতে থাকেন। পরে নিরুপায় হয়ে মাকে অন্য ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ী ফিরতে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক স্টাফ বলেন, কিছুদিন আগে আমার বোনকে নিয়ে জেমী ম্যাডামের কাছে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলেন। এ সময় আমি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষার কথা বললে তিনি আমার সাথেও বাজে আচরণ করেন। এছাড়াও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে রোগীদেরকে বিনামূল্যে ঔষধ স্যালাইন না দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতালে আসা বেশ কয়েকজন রোগীর কাছ থেকে। এ বিষয়ে চিকিৎসক মোনামিন জেমী বলেন, আমি কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করিনি। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল মাঝে মাঝে আমার প্যাড ব্যবহার করে থাকে। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হাসান মাহমুদ বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন