
বাংলাপ্রেস ডেস্ক: নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতুর নাম সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে নিমিষেই খসে পড়েন চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে।
১৯৯৩ সালে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। প্রয়াত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত সিনেমাটি দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্কার করল এক নবাগত নায়কের অসাধারণ অভিনয়শৈলী। এমনি করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা প্রেক্ষাগৃহ মুখী হলেন, পরিচালকরা হলেন আস্বস্ত। এমনি করে সুদিন ফিরে আসে বাংলার চলচ্চিত্রে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অচেনা অজানা সালমানকে। বাংলা চলচ্চিত্রের ত্রাতা হয়ে একে একে উপহার দিলেন দুর্দান্ত ২৭টি সিনেমা।
অভিনয়ের জাদু দেখালেন, সবার মন জয় করলেন আবার কাউকে কিছু না-বলে একবুক চাপা অভিমান নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে বিস্মিত করে না ফেরার দেশে চলে যান নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর এত বছর পরও দর্শক হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন ঢালিউডের হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহ।
ঢাকাই সিনেমার ক্ষনজন্মা এই সুপারস্টারের মৃত্যু আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা। ২৯ বছর ধরেই তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে থানা পুলিশ, সিআইডি, ডিবি, র্যাব ও সর্বশেষ পুলিশের বিশেষ তদন্ত বিভাগ পিবিআই। বিচার বিভাগীয় তদন্তও হয়েছে। এর পরও কোনো সংস্থাই রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
সর্বশেষ পিবিআই সাড়ে তিন বছর তদন্ত শেষে চার বছর আগে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতেও শেষ হয়নি মামলাটি। পুনঃ তদন্তের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সালমান শাহর পরিবার। তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করা হয়েছে।
রিভিশন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। গত ২৬ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেনের আদালতে রিভিশন পিটিশনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী এদিন আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে নতুন তারিখ দিয়েছেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক হয়নি মর্মে আমরা আদালতে দাবি করেছি।
তিনি আরও বলেন, রিভিশন আবেদনকারী হলেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডে রয়েছেন। তিনি অসুস্থও। তার ভাই আলমগীর কুমকুমকে রিভিশনকারী হিসেবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন।
এদিকে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে তার কিছু ভক্ত ব্যানার নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে গত ২৬ আগস্ট মানববন্ধন করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার ১১/বি নম্বর ফ্ল্যাটে নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহকে পাওয়া যায়। তখন প্রথমে হলি ফ্যামিলি এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। ওই মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ ও পরে ডিবি তদন্ত করে।
তদন্তকালে সালমান শাহর লাশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। এতে পরিবার আপত্তি জানালে লাশ কবর থেকে তুলে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু লাশ পচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা অপমৃত্যু বলেই প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর বাদী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে নারাজি দিলে ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মজিবুর রহমান তদন্ত করেন।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি/কেজে
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]