
সুলতানা মাসুমা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যাল থেকে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদী নতুন জাতের সয়াবিন চাষে হেক্টর প্রতি প্রায় ৩ টন উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো: গিয়াস উদ্দিন মিয়া।
তিনি বলেন, বিইউ-১ ও বিইউ-২ জাতের সয়াবিন প্রদর্শনী পরিদর্শনে বুঝা যায়, বিইউ-১ জাতের সয়াবিনের আবাদের ৯৫ দিনের মধ্যে ফসল হারভেস্ট করা যায়। নতুন জাতের বিইউ-২ জাতের আবাদকৃত সয়াবিনে ১০দিন বেশি সময় লাগলেও উচ্চফলনশীল। উন্নত এ জাতের সয়াবিন উৎপাদনে বছরে হেক্টর প্রতি ১.৫৬ মে.টন থেকে ২.৩৮ মে. টনে উন্নিত হয়েছে। এছাড়াও জীবনকাল প্রায় ২৫-৩০ দিন কমেছে। এতে প্রোটিন অনেক বেশি। এতে ৫৬ শতাংশ বেশি প্রোটিন রয়েছে। যা অন্য কোন শাকসবজিতে পাওয়া যায় না।
সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার খায়েরহাট এলাকায় ‘উন্নত জাতের ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সয়াবিন চাষ ও সম্প্রসারণ বিষয়ক সেমিনার ‘কৃষক সমাবেশ ও মাঠ দিবস’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ বক্তব্য দেন তিনি। সলিডারিডার নেটওয়ার্ক এশিয়া নামক একটি এনজিও সংস্থা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে সয়াবিন একটি রয়েল ক্রপ্ট। উৎপাদিত এ সয়াবিন তেল থেকে শুরু করে মানুষের খাবার, পশুর খাবারসহ এমন কোন কিছুতে নেই,যাহাতে সয়াবিনের ব্যবহার হয়না। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার উপকূলীয় এ অঞ্চলগুলোতে আমন ও আউশের মাঝামাঝি সময় গুলো জমি খালি পড়ে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে ওই সময়গুলোতে উন্নত জাতের সয়াবিন আবাদ করে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছে। সয়াবিন চাষে কৃষকের বাড়িতি দেখবাল করতে হয় না। যা চাষে লবন সহিষ্ণু পরীক্ষিত।
তিনি আরো বলেন, সয়াবিন উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেন্সিং ছিলো। এক সময় কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতো। কিন্তু বর্তমানে নতুন দুই জাতের সয়াবিনে বেশি উৎপাদন আসায় কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগে জলাবদ্ধতায় এখানকার চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে কৃষি জমির পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বক্তারা জানান, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া সংস্থাটি উচ্চফলনশীল এ সয়াবিন বাজার ব্যবস্থাপনার সহজিকরণের লক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় করে কাজ করছে। এনজিও সংস্থাটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর ও নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ৩৫ হাজার ৮৭০ জন চাষির মাধ্যমে ৩১ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সয়াবিন চাষ নিশ্চিত করেছেন। লবন সহিষ্ণু জাতের বিস্তারের মাধ্যমে এনজিও সংস্থাটি উপকূলের এক লাখ চাষির মাঝে সয়াবিনের বিস্তার করবে। যা প্রতি বছর ২ লক্ষ মে.টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিইউ-১ ও বিইউ-২ জাতের সয়াবিনের উদ্ভাবক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো: আবদুল করিম, সলিডারিড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান, নোয়াখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক ড. মো: মহী উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী ও সলিডারিডাড এর জেলা সমন্বয়ক প্রদীপ কুমার প্রমূখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেণ, এ অঞ্চলের প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এর আগে উন্নত জাতের সয়াবিন প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন আগত অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শেষে সয়াবিনে তৈরি বিভিন্ন খাবার সামগ্রীর ও উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তিক মেশিনের স্টল পরিদর্শন করেন তারা।
বিপি/কেজে
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]