জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মী কর্তৃক একাধিক সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। এসময় তিনি ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। অভিযুক্ত গাজী মো. শামসুল হুদা নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির নির্দেশে এঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে আটটায় ও ৯টা নাগাদ দুইদফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ও রফিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একাউন্টিং অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে এক ভলান্টিয়ারের সাথে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন ও একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবাইকে সরিয়ে দিতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী গাজী এক শিক্ষকের গায়ের উপর এসে পড়ে। তখন কর্তব্যরত এক সাংবাদিক তাকে পরিচয় জানতে চেয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে সে উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিককে মারতে উদ্যত হয়। পরবর্তীতে কামরুল হাসান রিপন ও অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবাইকে সরিয়ে দেয়।
পরে বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য অভিযুক্ত গাজী ও তার নেতাকর্মীদের পাঠান। কিন্তু সমঝোতা করতে এসে গাজী এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম আবর্তনের ফজলে রাব্বি সহ আরও একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের পরিচয় দিলে গাজী আক্রমণাত্মক হয়ে বলেন, “তোর প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের পুটকির মধ্যে ঢুকায় দিবো।” এসময় রাব্বি প্রেসক্লাবের অন্য সাংবাদিকরা তার জুনিয়র হওয়ায় তাদের উপরে চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি শুরু করে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী গাজী মো. শামসুল হুদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটু ঝামেলা হয়েছিল সেটা মিউচুয়াল হয়ে গেছে।’ এসময় গালাগালির কোনো ভিডিও থাকলে সেটা দিয়ে কি করতে পারবা করে দেখাও বলে বারবার প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নির্দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবর্ণ আসসাইফ বলেন, প্রথমে ঘটনা ঘটার পর আমি শুনলাম আমার সহকর্মীকে মারার জন্য গাজী দাড়িয়ে আছে, ‘এটা শোনার পর আমি আমার দায়িত্বশীল জায়গা থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ভাইকে ফোন দিয়ে জানাই। তিনি জানান বিষয়টি দেখছেন। এর ৫-১০ মিমিট পর গাজী এসে আবারও ওই সহকর্মীসহ অন্য সহকর্মীদের গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করে। আমার কথা হলো একজন সভাপতি নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা এমন ব্যবহার কিভাবে করে। আমাদের মনে প্রশ্ন তৈরিই হয় তিনি এমন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে কি না। ‘
এবিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ‘আমি বিষয়টা শুনেছি। একাউন্টিং বিভাগের প্রোগ্রামে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটেছিলো। পরে ঘটনাটি মিটমাট করতে গেছিলো। কিন্তু এইরকম বাজে মন্তব্য সে করে থাকে তাহলে আমি নিজে এর বিচার করবো এবং ব্যবস্থা নিবো।’
এ বিষয়ে জবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসান বলেন, ‘এরকম ঘটনা একবার নয়, ইব্রাহীম-আকতার কমিটি আসার পরে বার বার ঘটতেছে। আজকের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সবচেয়ে বড় বিষয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে অবগত করার পরেও তিনি তার কর্মীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন নি। আমরা আশা করবো সাংগঠনিকভাবে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছি। দুইজন সহকারী প্রক্টরকে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলাম। এধরণের কাজ কখনোই সমীচীন নয়। লিখিত অভিযোগ দিলে, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এবিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান বলেন, ‘এমন কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাকিম ফারুকী ও সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসান যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্তা ও মারধরের ঘটনা ঘটে চলেছে। বারবার ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে। সেই সাথে কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইন য নিরাপত্তার শঙ্কা শৃঙ্খলা বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এর আগে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ আছে। ইব্রাহিম-আকতার কমিটির সময়ে গতবছরের ৪ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেয়ার নজির রয়েছে। বিগত বছরের ৪ ডিসেম্বর ৪ জন সাংবাদিকের উপর অতর্কিত হামলাও চালায় তারা। এছাড়া সাংবাদিক হেনস্থা নিয়ে কোতয়ালী থানায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একাধিক জিডি করা আছে।
বিপি/কেজে