রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী মহানগরীর কাজলা অক্ট্রয় মোড় (বিলপাড়া) এলাকার নব্য বাসিন্দা মোসাঃ নাহিদা আক্তার অরফে শ্যামলী (৪২) নামের এক প্রতারক নারীর মুখোশ খুলে দিয়েছে ফারহানা ফ্লোরা নামের এক নারী।
সরকারী চাকরী দেওয়ার কথা বলে ১০লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ এনে ভূক্তভোগী ফারহানা ফ্লোরা (৩০) রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩০, তাং- ২৭ জুলাই ২০২৩। ওই মামলায় প্রতারক শ্যামলীর সাথে যুক্ত তার দ্বিতীয় স্বামীকে আজাদকে আসামী করা হয়েছে।
আসামীরা হলো: মোসাঃ নাহিদা আক্তার অরফে শ্যামলী, তিনি মহানগরীর মতিহার থানার কাজলা অক্ট্রয় মোড়, (বিলপাড়া), এলাকার মোঃ মাসাদুজ্জামান মাসাদের স্ত্রী। অপর আসামী দ্বিতীয় স্বামী মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ অরফে আজাদ (৪৮), তিনি রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রীমা থানার ভদ্রা (মেঘ রোদ্র বাড়ী নং- ১৩৩, সড়ক নং-৫, পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা), তার পিতার নাম মোঃ মেসবাহ উদ্দিন, তিনি বোয়ালিয়া থানার বালিয়া পুকুর এলাকার বাসিন্দা।
মামলার বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রতারক শ্যমলী ও ভুক্তভোগী ফ্লোরা তারা একই পরিবারে পালিত বোন। শ্যমলীর দ্বিতীয় স্বামী মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ আজাদ একজন সরকারী বড় কর্মকর্তা বলে জানায় ভুক্তভোগীকে। সে চাইলে রাজশাহী জেলার যে কোন কলেজ বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পিয়ন অথবা আয়া পদে চাকুরী দিতে পারবে বলে প্রলোভন দেখায়। এই জন্য ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। বোনের কথা বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী তার স্বামী রিংকু ও শাশুড়ির সাথে আলাপ আলোচনা করে গত (১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২) সকাল ১১টার দিকে ভুক্তভোগী ও তার স্বামী রাজশাহীতে এসে প্রতারক শ্যামলী ও তার দ্বিতীয় স্বামী আজাদকে নগদ ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। তারা বলেন, তিন মাসের মধ্যে চাকুরীতে যোগদান করানো হবে।
সে সময় আরও ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও চাকরি তো দুরের কথা টাকা ফেরত দিতে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করতে থাকে প্রকতারগণ। এরপর ভুক্তভোগীর বোন প্রতারক শ্যামলীকে পারিবারিকভাবে টাকা ফেরত দেওয়া জন্য চাপ দিলে তার দ্বিতীয় স্বামী আজাদ ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের চেক ও স্ট্যাম্প দেয় ভুক্তভোগীকে। ব্যাংকে গিয়ে ভুক্তভোগী জানতে পারেন আসামীর দেওয়া চেকের একাউন্টে কোন টাকা নাই। প্রতারকদের বিষয়টি জানানো হলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় প্রতারক শ্যামলী। ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তারা চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হন।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশের এসপি ও বিশিষ্টি ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারক আজাদ ও শ্যামলী রাজশাহী মহানগরীর কাজলা, দারুসা-সহ বিভিন্ন এলাকা, পুঠিয়া থানার হলিদাগাছি ও গোদাগাড়ী থানা এলাকায় প্রায় কোটি টাকা টাকা প্রতারণা করেছে। শুধু তাই নয় রাজাবাড়ি থানার বিজয় নগর এলাকায় শতফুল নামের এক এনজিও’তে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে টাকা পরিশোধ করে নাই বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যপারে প্রতারক শ্যামলীর প্রথম স্বামী মোঃ মাসাদুজ্জামান মাসাদের নিকট তার স্ত্রী’র দ্বিতীয় স্বামী বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, আজাদ আমার চির শত্রু। তারপরও একসাথে দুই স্বামী’র সংসার বৈধ না অবৈধ জানতে চাইলে তিনি আলোচনা থেকে উঠে সটকে পড়েন।
একাধিক স্থানীয়রা জানান, মাসাদ একজন অর্থলোভী ও কৃপন ধরনের মানুষ। তার স্ত্রীর সকল বিষয়ে তিনি অবগত। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে তার হাতে তুলে দিলেই তিনি খুশি। স্ত্রী চলাফেরা বা বাড়িতে ঠিকমতো না থাকা এটা তার মাথার ব্যাথার কার না।
মামলার ব্যপারে জানতে চাইলে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), মোঃ সোহরাওয়ার্দী জানান, বাদী পক্ষের সাথে মুখোমুখি বসার জন্য আসামী শ্যামলী ও বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী তার দুই স্বামী মাসাদ ও আজাদকে থানায় ডাকা হয়েছিলো। ১৫দিন ধরে তারা বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করেছে। ১৫দিন পরে থানায় আসবে না বলে জানায় তারা। তাই অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে শ্যামলীর স্বামী মাসাদ একজন শিক্ষক। তাই তার বিরুদ্ধে বাদীর লিখিত অভিযোগ থাকলেও মানবিক কারনে তাকে আসামী করা হয়নি।
বিপি>আর এল