বাংলাপ্রেস ডেস্ক: বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকের কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরের রাস্তাঘাট। কখনো থেমে থেমে কখনো প্রবল বর্ষণ, এরসঙ্গে জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে নগরীর সড়কে কোথাও গলাপানি, আবার কোথাও বুকপানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, রেয়াজ উদ্দিন বাজারে পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। অতি ভারি বর্ষণে নগরীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রেললাইনে পানি থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে পৌঁছতে না পারায় সোমবার (৭ আগস্ট) সব ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। টানা বর্ষণে কোটি মানুষের নগর চট্টগ্রামে ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করছে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে গত ৫ বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বহুমুখী দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। লাইনে পানি ঢুকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। ওয়াসার পাইপ লাইনে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। দুর্যোগ আর দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর বিভিন্ন স্থানে ধস নেমেছে। প্রশাসন আরো পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে। পাহাড়ি লোকজনকে চলে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রবল বর্ষণে নগরীর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাকলিয়া ও খাতুনগঞ্জ, চাকতাই এলাকায়। জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানে পানির উচ্চতা ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। সাগরের পানির জোয়ার ভাসিয়ে নেয় নগরীর বড় একটি অংশ। এতে বিশাল এলাকা জুড়ে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। নগরীর কোথাও গলাপানি, আবার কোথাও কোমরপানিতে ডুবে যাচ্ছে নগরী। বিশেষ করে নগরীর বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, কালামিয়া বাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, রামপুরা, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, বহদ্দারহাট, নাসিরাবাদ, জালালাবাদ, কাপাসগোলা, ডিসি রোড, পাহাড়তলী, বন্দরসহ প্রায় পুরো নগরীই এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। কোমর সমান পানি হওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটেও। নগরীর খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজার, আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, রেয়াজুদ্দিন বাজার, ষোলশহর শপিং কমপেক্সসহ বেশকিছু মার্কেটের দোকান ও গুদাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রক্ষা করা যাচ্ছে না মালামাল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজুদ্দিন বাজারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। পানিতে ভিজে গেছে এসব ব্যবসা কেন্দ্রের অনেক দোকান ও গুদামের মালামাল। নিচু এলাকার সড়কের পাশের দোকানপাটে পানি ঢুকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানির পাশাপাশি চাক্তাই খাল থেকে উপচেপড়া জোয়ারের পানি ঢুকছে পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। এক সপ্তাহের বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক অবকাঠামো অনেকটা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দক। ভাঙাচোরা সড়কে যানচলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
বিপি>আর এল