Home আন্তর্জাতিক ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন মধ্যপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান

ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন মধ্যপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান

by বাংলাপ্রেস ডেস্ক
A+A-
Reset

বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ইরানের নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন মধ্যপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৪টায় দেশটির পার্লামেন্টের প্রধান হলে শপথ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এতে ৭০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিসহ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

শপথ নেয়ার সময় পেজেশকিয়ান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে পবিত্র কুরআন ও ইরানি জাতির সামনে আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে শপথ করছি যে, আমি রাষ্ট্রীয় ধর্ম, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ব্যবস্থা এবং দেশের সংবিধানকে সুরক্ষিত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য আমার সমস্ত সক্ষমতা এবং যোগ্যতা উৎসর্গ করব এবং আমি জনগণের সেবা ও জাতিকে উন্নত করতে ধর্ম ও নৈতিকতার প্রচার, ন্যায়পরায়ণতার প্রতি সমর্থন এবং ন্যায়বিচারের প্রসারে নিজেকে নিবেদিত করব।’ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেইন মোহসেনি এজেয়ি। খবর জিও নিউজ।

এর আগে রোববার (২৮ জুলাই) মাসুদ পেজেশকিয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। চলতি মাসের ৬ জুলাই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি মূলত মধ্যপন্থী হলেও কেউ কেউ তাকে সংস্কারপন্থী হিসেবেও দেখেন। তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থী সাঈদ জলিলিকে পরাজিত করেন।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) খামেনির কার্যালয় থেকে এক বার্তায় বলা হয়, জ্ঞানী, সৎ, জনপ্রিয় এবং বিজ্ঞ পেজেশকিয়ানকে আমি সমর্থন করি এবং আমি তাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করছি। আজ পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে।

দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, পেজেশকিয়ান পান ৫৩.৩ শতাংশ ভোট এবং সাঈদ জালিলি পান ৪৪.৩ শতাংশ। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত সাঈদ জালিলিকে তিনি পরাজিত করেন। নির্বাচনে জয় লাভ করার পর থেকেই মাসুদ পেজেশকিয়ানকে নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

সংস্কারপন্থী এই রাজনীতিবিদ ইরানিদের কাছে আশার দিশারি হয়ে উঠেছেন। কারণ মানুষের সামাজিক স্বাধীনতার ওপর কঠোর কড়াকড়ি আরোপ না করা এবং বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির প্রতিশ্রুতির জন্য এই নেতাকে নিয়ে ইরানিরা নতুন আশা দেখছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তির পথে হাঁটতে পারেন।

৬৯ বছর বয়সী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ইরানের পররাষ্ট্রনীতিকে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করাসহ রাজনৈতিক যে অস্থিরতা রয়েছে তা কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন। তবে সেটি বাস্তববে কতটা সম্ভব হবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

ইরানের দ্বৈত নীতির রাজনৈতিক কাঠামোতে একজন প্রেসিডেন্ট চাইলেই নিজের মতো করে রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন না। কারণ ইরানের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির তত্ত্ববধায়নে। তবে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াতে কিছুটা প্রভাব রাখার সুযোগ পাবেন।

নির্বাচনের প্রচারণার সময় পেজেশকিয়ান টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তিনি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর নীতির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করবেন না। তবে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যদি তিনি সেটা না পারেন তাহলে রাজনীতি থেকে নিজেকে বিদায় জানাবেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, জনগণকে সেবা দিতে না পারলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।

মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট পদে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন দেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামি। কারণ ইরানে বহু বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসানে তিনি পেজেশকিয়ানের মধ্যে তেমন কিছু দেখতে পেয়েছেন।

বলা হচ্ছে ইব্রাহিম রাইসির ঠিক বিপরীতে কাজ করবেন পেজেশকিয়ান। তিনি রাষ্ট্রীয় অব্যস্থাপনা, দুর্নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট দিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, হিজাব আইনের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু এর জন্য নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা উচিত নয়। ১৯৮০ সালের ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সময় মাসুদ পেজেশকিয়ানকে সম্মুখ সারির চিকিৎসকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মাসুদ পেজেশকিয়ান তার স্ত্রী ও এক সন্তান হারান। পরবর্তীতে তিনি আর বিয়ে করেননি। তবে তিনি দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন।

বিপি/টিআই

 

 

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী