ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইমলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে শ্মশানে পরিণত করেছে। একমাত্র আল্লাহ পাকই জালিমদের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার আল্লাহ পাকের নিয়ামত। তারা ভুল করলে ধরিয়ে দেব। কিন্তু একগুয়েমি বরদাশত করবো না। শুরু থেকেই এই সরকারকে আমরা সহায়তা করছি।
আমাদের নেতাকর্মীরা দেশে শৃংখলা বজায় রাখছে। তিনি বলেন, ছাত্র জনতার গনআন্দোলনে হাসিনা ও তার দোসররা পালিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। পর্দার আড়াল থেকে হাসিনা ও তার দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
জামায়াত আমীর বলেন, যে আল্লাহ জনগনের বুক থেকে ফ্যাসিষ্ট হাসিনাকে সরিয়ে দিয়েছে, সেই আল্লাহই তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। জামায়াত আমীর বৃহস্পতিবার বিকালে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে এক বিরাট কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের ১১জন দায়িত্বশীল নেতাকে বানানো সাক্ষি ও ক্যাঙ্গারুকোর্ট বসিয়ে পাতানো রায়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিচারের জন্য জামায়াত লড়াই করে যাবে। জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আলী আজম মোঃ আবু বকরের সভাপতিত্বে সমাবেশ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখনে কেন্দ্রীয় নেতা মোবারক হুসাইন, মাওলানা আজিজুর রহমান, ড. মাওলানা মুজাম্মেল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাই, আব্দুল আলীম, আবু তালিব, ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান, ছাত্র শিবিরের ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি মনিরুজ্জামান, মেহেদী হাসান রাজু ও এইচ এম আবু মুসাসহ জেলা উপজেলার জামায়াত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
জামায়াত আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫টি বছর আমরা দুঃশাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বাসায় ঘুমাতে পারিনি, অফিসে বসতে পারিনি, আদালতে ন্যায়ের কথা বলতে পারিনি, খুন গুমের শিকার হয়েছি। কখনো মাঠে কখনো খালে বিলে নদীতে ঘুমাতে হয়েছে। আর ফ্যাসিষ্ট সরকারের জুলুমের পানি এক হয়ে এক একটা বঙ্গপোসাগরে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, হাসিনার মন্ত্রী এমপিরা বলেছিল তাদের সরকারের পতন হলে দেশে ৫ লাখ মানুষ মারা যাবে। তিনি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, দেশে কি ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে ? ৫ হাজার, পাঁচ’শ, পঞ্চাশ বা ৫ জনও মানুষ মারা যায়নি। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিষ্ট না তা দায়িত্বশীল ও শান্তিকামী। প্রকৃতপক্ষে আ’লীগই ফ্যাসিষ্ট ও ষড়যন্ত্রকারী। তারা ক্ষমতায় এসে বার বার ষড়যন্ত্র করে। মানুষকে ধোকা দিয়েছে। যারা পালাবো না বলে দম্ভ করেছিল তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করেতা না। এ জন্য তারা অপকর্ম করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন আমাদের বার্তা স্পষ্ট।
আমরা এমন এক সমাজ চাই, যে সমাজে কোন বৈষম্য থাকবে না। তিনি বলেন আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নেমেছিল। তারা বলেছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আল্লাহ পাক যদি আমাদের দায়িত্ব দেন, তবে আমরা তাদের কথা রাখবো। আমরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়বো, যেখানে কোন যুবকের হাত খালি থাকবে না। সবাই পড়ালেখা শেষ করে চাকরী পাবেন। নৈতিক শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। আমরা তরুণদের হাতেই বাংলাদেশকে তুলে দেব। তিনি বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের গৃহবন্দি করা হবে বলে যে মিথ্যা অপপ্রচার রয়েছে তার জবাবে জামায়াত আমীর বলেন, দেশে যদি ইনসাফ ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্র কায়েম হয়, তবে নারীদের সমাজ উন্নয়নে ভুমিকা রাখার সুযোগ করে দেবে। তারা কখনোই ঘরবন্দি থাকবেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জালেম আ’লীগ সরকারের সিন্ডিকেটই এখন বাজারদর নিয়ন্ত্রন করছে। এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। জামায়াতের আমীর দুপুরে ২টা ৪০ মিনিটে মঞ্চে আসন গ্রহন করেন এবং ৩.১৮টায় বক্তব্য দিতে শুরু করেন। জামায়াতের এই কর্মী সমাবেশ উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহ শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সারা শহরে কোন তিল ধারণের ঠাই ছিল না। মানুষ দালান কোঠা, বাড়ির ছাদ ও আশপাশের গাছে উঠে জামায়ত আমীরের বক্তব্য শোনেন। সমাবেশে তিনি এক শহীদ পরিবারের শিশু সন্তানকে কোলে তুলে চিুম্বনে চুম্বনে ভরে দেন এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বিপি/কেজে