বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ভারতের বিভিন্ন রুটে চলা ফ্লাইট একের পর এক বোমা হামলার হুমকি পাচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১১ টি ফ্লাইট এ ধরনের হুমকি পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। এছাড়া এক সপ্তাহে এ ধরনের অন্তত ৫০ টি প্রতারণামূলক কল পেয়েছে দেশটির বিভিন্ন এয়ার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এগারোটি ফ্লাইট বোমার হুমকি পেয়েছে। এই সপ্তাহে এয়ারলাইনগুলোর পাওয়া এমন হুমকির তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। তবে আকাশপথে একটি অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিন দিল্লি থেকে লন্ডনগামী ভিস্তারা ফ্লাইট (ইউকে১৭) বোমার হুমকির পরে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি জয়পুর-দুবাইগামী এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট (আইএক্স ১৯৬) কে-ও হুমকি দেয়া হয়, তবে হুমকিটি জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া আকাসা এয়ারের পাঁচটি ফ্লাইট এবং ইন্ডিগোর পাঁচটি ফ্লাইট শনিবার (১৯ অক্টোবর) বোমার হুমকি পেয়েছে।
বোমার হুমকি পেয়ে জয়পুর-দুবাই (আইএক্স ১৯৬) ফ্লাইটটি যথাসময়ে উড্ডয়ন করতে পারেনি। শনিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ৭টা ৪৫ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এদিকে ভিস্তারার ফ্লাইটটি ফ্রাঙ্কফুর্টে ফিরিয়ে দেয়ার পরে, সেখান ঠেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা পুনরায় শুরু করে।
একজন মুখপাত্র জানান, “ভিস্তারা ফ্লাইট ইউকে১৭ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দিল্লি থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি হুমকি পায়। পরে প্রোটোকলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে,সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি দ্রুত অবহিত করা হয়। পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাইলটরা ফ্লাইটটিকে ফ্রাঙ্কফুর্টে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”
আকাসা এয়ার বলেছে, “আমাদের শনিবারের (১৯ অক্টোবর) বেশকিছু ফ্লাইট নিরাপত্তা সতর্কতা পেয়েছে। নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা পদ্ধতি অনুসারে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সব যাত্রীকে সরিয়ে নেয়। আমাদের টিম এ ধরনের অসুবিধা রুখতেযথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।”
এদিকে বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বাইগামী আকাসা এয়ারের একটি ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ আগেই বোমার হুমকি পায়। এক বিবৃতিতে এয়ারলাইনটি বলেছে, “শুক্রবার বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বাই যাওয়ার ফ্লাইট কিউপি১৩৬৬, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ আগে একটি নিরাপত্তা সতর্কতা পায়। এসওপি অনুযায়ী মুম্বাই বিমানবন্দরে নিরাপত্তার জন্য বিমানটিকে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে কোনো ধরনের আপত্তিকর জিনিসপত্র সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমানটিকে ফ্লাইটের জন্য এনওসি দিলে কয়েক ঘণ্টা দেরি করে সেটি মুম্বাই থেকে বেঙ্গালুরুতে যাত্রা শুরু করেছিল।”
অন্যদিকে গত সোমবার থেকে অন্তত ৫০টি ফ্লাইট একই ধরনের হুমকি পেয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমশিম খেতে দেখা যাচ্ছে। এর আগে কয়েকটি সূত্র এনডিটিভিকে বলেছিল যে, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) পরামর্শ দিয়েছেন, পাঁচ বছরের জন্য ভুয়া কলকারীদের নো-ফ্লাই তালিকায় রাখতে হবে। আর বিমান সংস্থাগুলোর পরামর্শ, ভুয়া বোমার হুমকির কারণে তাদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা অভিযুক্তদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী কী বলছেন?
এই পরিস্থিতিতে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে কোনও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত নেই। বেশিরভাগ কলই “অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্র্যাঙ্কস্টারা করেছেন”।
সোমবার তিনটি আন্তর্জাতিকসহ মোট চারটি ফ্লাইটে হুমকি দেয়ার অভিযোগে, বুধবার ১৭ বছর বয়সী এক ছেলেকে হেফাজতে নিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে ওই কিশোর তার এক বন্ধুকে ফাঁসাতে চেয়েছিল, কারণ বন্ধুর সঙ্গে তার টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধ ছিল।
মন্ত্রী বলেছেন যে তার বিভাগ ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের প্রতারণামূলক বোমা কল না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ম ও আইনের পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করছে। তার কথায়, “আমরা একটি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারি না, তবে আমরা যা কিছু জেনেছি, তা (হুমকি) নাবালক বা কিছু প্র্যাঙ্কস্টারদের কাছ থেকে আসছে। খুব সামান্য, তুচ্ছ জিনিসের জন্য, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ফোন কলের মাধ্যমে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করছে। সুতরাং এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এখানে মন্তব্য করার মতো ষড়যন্ত্রের কোনো আভাস নেই।”
বিপি/টিআই