Home আন্তর্জাতিক প্রতিবছর থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে ৪৯ মিলিয়ন টার্কি খায় মার্কিনিরা

প্রতিবছর থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে ৪৯ মিলিয়ন টার্কি খায় মার্কিনিরা

প্রবাসীরা খোঁজেন হালাল

by bnbanglapress
A+A-
Reset

 

আবু সাবেত: বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন দিবস বা থ্যাঙ্কস গিভিং ডে। থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র অর্থ কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন বা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবস। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের চতুর্থ বা শেষ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপন করা হয়। দিবসটিতে ধনী-গরিব সবাই মেতে ওঠে ঐতিহ্যবাহী টার্কি ভোজে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি ঘরেই চলছে টার্কির মধ্যাহ্নভোজ আর নৈশ্যভোজ।
যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে। ধনী-গরীব সকলেই মেতে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী টার্কি ভোজে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি ঘরেই চলছে টার্কির মধ্যাহ্নভোজ আর নৈশ্যভোজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর তথ্যানুসারে মার্কিনিরা শুধুমাত্র থ্যাঙ্কসগিভিং ডেতে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন টার্কি খেয়ে থাকেন।
এটি প্রতি বছর বেড়ে ওঠা মোট টার্কি সংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ। যা স্পেনের সমগ্র জনসংখ্যার মতো। অর্থাৎ মার্কিনিরা ছুটির সময় প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন পাউন্ড টার্কি খায়।
ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশন রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৮৮ শতাংশ মার্কিনি থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের জন্য টার্কি খায়।
ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশনের মতে প্রতি বছর আমেরিকানরা ৯০ মিলিয়ন টার্কি খেয়ে থাকেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র থ্যাঙ্কস গিভিং ডে টার্কি খাওয়া হয় ৪৯ মিলিয়ন। বড়দিনে বা খ্রিষ্টমাসে ২২ মিলিয়ন এবং ইস্টার সানডে’তে ১৯ মিলিয়ন।
১৬২১ সালের এক হেমন্তে আমেরিকার আদি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানত ইংল্যান্ড থেকে আগত যাজকদের এক শুভক্ষণে পরস্পরের মধ্যে উৎপাদিত শষ্য এবং পণ্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ‘থ্যাংকস গিভিং’ উৎসবের সূত্রপাত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সেদিনের সেই বন্ধুত্ব এবং শান্তির অমিয়বাণী আমেরিকাবাসীর অন্তরে ধারণ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটিকে ‘থ্যাংকস গিভিং হলি ড’ হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে প্রতিবছর বন্ধুত্ব ও সংহতি প্রকাশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্মরণীয় বরণীয় করে তুলতে নানা আয়োজনে মেতে উঠে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র। দিনটি আমেরিকায় সরকারি ছুটির দিন। একই আমেজে পার্শ্ববর্তী দেশ কানাডায় এ দিনটি পালন করা হয় প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সোমবার।
গত দু’সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন টার্কির বেচাকেনা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাৎ যাদের টার্কি কেনার সাধ্য নেই, তারাও টার্কি সংগ্রহ করেছে ফুড শেয়ার নামক একটি সংস্থা থেকে। থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে যেন টার্কি না খেলেই নয়। তাই টানা চার দিনের ছুটি পেয়ে সকলেই ছুটছে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিকটজনের সাথে দেখা করতে। আকাশ ও সড়ক পথে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড়। গত তিন দিন ধরে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের ছুটিতে। বিশেষ করে আকাশ পথে আভ্যন্তরিন বিমানের টিকেট বিক্রি হয় দ্বিগুন। প্রতি বছর বিমান যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে গত বছর থেকে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিশট্রেশন (টিএসএ) নতুন নিয়ম চালু করেছে। এখন থেকে ১২ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের বিমানে ভ্রমনকালে সিকিউরিটি চেকিংয়ে জুতা খুলতে হবে না। গত বছর দেয়া এ ঘোষনায় এখনও বলবৎ রয়েছে, তা শুনে বিমানবন্দর গুলোতে আগত যাত্রীরা কিছুটা খুশি হয়ে উঠেন। এ আইন আর কতদিন বলবত থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ঘরে বসে নেই। হালাল টার্কির খোঁজে তারাও ছুটছেন স্থানীয় গ্রোসারির দোকানগুলোর। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গ্রোসারি দোকানগুলো হালাল টার্কি সংগ্রহে ভিড় জমেছে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস,ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ম্যারিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনাসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি ও মুসলমান মালিকানাধীন গ্রোসারির দোকানগুলোতে প্রচুর পরিমানে হালাল টার্কি বিক্রি করেছে। গত তিন দিন ধরে উক্ত দোকানগুলোতে দেদারছে চলছে হালাল টার্কির বেচাকেনা।
থ্যাংকস গিভিং ডে’র পরের দিনকেই ‘ব্লাক ফ্রাইডে’ বলা হয়ে থাকে। এ দিনের জন্যও মানুষের অপেক্ষার কমতি নেই। একবছর ধরেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে আমেরিকার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষজন কম দামে ভালো একটা কিছু কেনার জন্য দিন অপেক্ষায় থাকে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই টিভি ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া তাদের পণ্যের মূল্যহ্রাসের তালিকা। শতকরা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মুল্যহ্রাস করা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির। তবে এই দিনে অনেকের চাহিদা ইলেক্ট্রোনিক্স দ্রব্য। এর মধ্যে টিভি, ফ্রিজ,‌ ল্যাপটপ, কম্পিউটার, আইফোন, আইপ্যাড ইত্যাদি দ্রব্যের প্রতি মানুষের বেশি চাহিদা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে দোকানের সামনে লাইন ধরে অপেক্ষা করে ভোর ৬টায় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন দোকানে প্রবেশের জন্য। কিন্তু প্রতিবছরই ঘটে ব্যতিক্রম ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরিবর্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৮/৯ টায় থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান হাজার হাজার মানুষ।

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী