বাংলাপ্রেস ডেস্ক: কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমলেও এখন আবারও ঊর্ধ্বমুখী। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) কারা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানোর পাশাপাশি তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দি, কারা আইন সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জুলাই ও আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের সময় দেশের কারাগার থেকে পলাতক ২ হাজার ২০০ আসামির মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো ৭০০ আসামি পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ জন হলেন জঙ্গি ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, কারাগার থেকে এখন পর্যন্ত আলোচিত ১৭৪ জন আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে ১১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীও মুক্তি পেয়েছেন।
বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে প্রায় ৪২ হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার তথ্য তুলে ধরে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ৫ অগাস্টের আগে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার ছিল। সরকার পরিবর্তনের পর জামিন হওয়ায় বন্দির সংখ্যা কমে প্রায় ৫৫ হাজারে আসে। এখন এ সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬৫ হাজারে ঠেকেছে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে চার কারা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ১৯ জুলাই বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ সময় কারাগারে থাকা ৮২৬ জন বন্দী পালিয়ে যান।
আজ নরসিংদীর কারাগারে এই হামলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ব্রিগেডিয়ার মোতাহের বলেন, নরসিংদী কারাগারে হামলা ও আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কারাগারটির জেলারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে গাফিলতি পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে সাবেক মন্ত্রী ও নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের বলেন, কারারক্ষীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার কারণেই ঘটনাটি বেশি দূর গড়ায়নি। তবে নিশ্চিতভাবে সেখানে নিরাপত্তার দুর্বলতা ছিল। কারা অধিদপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, যাতে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
কারাগারের লোগোতে নৌকাসহ অন্যান্য জিনিস রয়েছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, নানা মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
১৭ কারাগার ঝুঁকিপূর্ণ
সারাদেশে বর্তমানে ৬৯টি কারাগার থাকার তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন বলেন, বন্দি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি কারাগার পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে ১৭টি কারাগার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এগুলো পুরাতন ভবন। এসব ভবন পুনঃনির্মাণ করা হবে।
কারা আইন সংস্কার হচ্ছে
কারা মহাপরিদর্শক জানান, অতি পুরনো কারা আইন ও বিধি-বিধান সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণসহ কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধি, পদ-পদবির আপগ্রেডেশন, নিয়োগবিধির পরিবর্তন- এ সকল বিষয় সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও আইন পরিবর্তনের বিষয়টি রাখা হয়েছে।
কারাগারে ডগ স্কোয়াড
কারাগারে মাদকদ্রব্য প্রবেশ রোধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা রোধ করা সম্ভব না হওয়ায় এবার ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
এ প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান কারা মহাপরিদর্শক।
২৪ ঘণ্টা হটলাইন
বন্দি ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কারাগার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সফটওয়্যার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন-আরএফআইডি ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম- জিপিএস ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি জানান, সেবাপ্রত্যাশীদের সহায়তার জন্য ২৪ ঘন্টা হটলাইন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে তারা অধিদপ্তর।
কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল হচ্ছে
কারাগারে আসা বন্দিদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলে কারাগারের বাইরে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি থাকে। অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা রেখে কারা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক মোতাহের হোসেন।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল হলে বন্দি রোগীদের অন্য কোন হাসপাতালে নিতে হবে না।
কারা কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারের ভেতরে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। বন্দি রোগীদের জটিল কোনো সমস্যা হলে বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের স্থানান্তর করা হয়ে থাকে।
বিপি/কেজে