নোমান সাবিত: দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা মেজর ডালিম অবশেষে সামাজিকমাধ্যম ইউটিউবের লাইভে আসেন। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান ও শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিষয়ে কথা বলেন তিনি। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে ‘লাইভে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডালিম (বীর বিক্রম)’ শিরোনামের এই লাইভে যুক্ত হন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেজর ডালিমের ছবির নিচে না ভেসে এলো রফিকের নাম। এ নিয়ে নিটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।
মেজর ডালিম বলেন, ‘মুজিব মারা যায়নি, একটি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন। বাকশাল বিদায়ের পরে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে এসে শুকরিয়া আদায় করেছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব তার জুলুমের মাত্রা এতোটাই তীব্র করেছিল স্বৈরাচারী আচরণের মতো যে, তখন মানুষ রবের কাছে মুক্তি চাচ্ছিল তার জুলুমের অবসানের জন্য।’
মেজর ডালিম বলেন, ‘তথাকথিত নেতারা যখন ভারত পালিয়ে গেল। ছিল না যখন কেউ নেতৃত্বের দেওয়ার। সমঝোতা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। পাকিস্তান বাহিনী যখন বাঙালির ওপর হামলে পড়েছিল। তখন মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা আসে। আমি তখন পাকিস্তান আর্মিতে। মেজর জিয়ার ঘোষণা শুনে মনে হলো, আর বসে থাকার সময় নেই। আমরা তখনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে গেলাম।’
এই বীর বিক্রম বলেন, যখন সাতদফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গভমেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব। তার এ বক্তব্যের পর কথিত সেই সাতদফা চুক্তির কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন,কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি ভারতের নাগরিক তিনি আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচিয়তা হবেন কেন? দেশে কী আর কোন কবি ছিলা না? আমাদের দেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিল। তিনি জানেন না যে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ভারতে। পুরো ভিডিওটিতে অনেকে ভুল্ভাল তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা দেখে বা শুনে ওই ব্যক্তি যে মেজর ডালিম তা কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না। শুধু তাই নয় স্ক্রীনের স্ক্রলেও প্রকৃত ব্যক্তির নাম দেখা গেছে রফিক নামে।
ভিডিও সাক্ষাতকারটি দেখে মোহাঃ শাহাদাত ভূঁইয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন-উবারের ড্রাইভার রফিক যখন ডালিম সাজে। অফিসিয়াল বয়স হিসাব করলে ডালিমের বয়স আশি চলে, কিন্তু এই ব্যাটার বয়স কোনওভাবেই আশি তো দূরের কথা ষাটের ঘরেই আছে, তাছাড়া এই গালগল্পের স্ক্রিপ্টও দুর্বল!
এই গালগল্পে জিয়াকে নিয়ে কিছু টুইস্ট আছে, তাতে মনে হচ্ছে এই নাটকের স্ক্রিপ্ট জামায়াতের তৈরি, এবং একজন আর্মি অফিসারের ইংরেজি উচ্চারণ এত নিম্নমানের হয় কী করে?
সাজানো ডালিমের ভাষ্যমতে তার বয়স এখন ৭৫; তাহলে জন্ম ১৯৪৯ সালে; ১৯৭৫ এ বয়স ছিলো ২৬; এ ডালিমের ভাষ্যমতে ১৯৬৪ সালে নাকি সে বিমানবাহিনীতে যোগদান করে, তাহলে তার ভাষ্যমতে ১৫ বছর বয়সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করার কথা, কিন্তু এই বয়সে বিশ্বের কোথাও কমিশন্ড হয় কীনা আমার জানা নেই।
এই তথ্যগুলো নিজের সম্পর্কে দিয়েছে সাজানো ডালিম, কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে ডালিমের অফিসিয়াল জন্ম ১৯৪৪ এর ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪ সালে ২০ বছর বয়সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করে; ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সে বিমানবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। নিজের তথ্য এভাবে একজন ঠাণ্ডা মাথার ভয়ংকর খুনি ভুলভাল দেবে না—এটা পাগলেও বোঝে।
তাছাড়া আশি বছরের একটা বুইড়া এমন কাঁচাপাকা চুল নিয়ে এখনও কীভাবে ফিট থাকে? আমার কাছে জামাতি স্ক্রিপ্ট মনে হয়েছে পুরোটাই। এখন দেখা যাক বিএনপির ফিডব্যাক কেমন হয়!
সাজানো এই নাটক করতে গিয়ে ইলিয়াস ভুল করে উবার রফিকের নাম দীর্ঘক্ষণ স্ক্রীনে রেখে তারপর চেঞ্জ করে, এই উবার ড্রাইভার রফিক যে আসল ডালিম না এটা বুঝতে রকেট সায়েন্স জানার প্রয়োজন নেই।
বিপি।এসএম