আবু সাবেত: যুক্তরাষ্ট্রে কোটা পদ্ধতিতে প্রতিদিন গড়ে ১০৩০ জনকে গ্রেপ্তার করছেন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসী দমনের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী। গত চার দিনে ৪ হাজার ১শত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই)। আইসিই’র বিভিন্ন ফিল্ডে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রেপ্তারের পরিমাণ নির্ধারন করে টার্গেট দেওয়া হয়েছে।
নতুন প্রশাসনের নির্দেশে রবিবার জানুয়ারি ৯৫৬, সোমবার ২৭ জানুয়ারি ১১৭৯, মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারি ৯৬৯ এবং বুধবার ২৯ জানুয়ারি ১০১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী লক্ষ্য আরও অনেক বেশি বলে আইসিই’র সুত্রে জানা গেছে।
ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছেন টম হোম্যান। তিনি আইসিইর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হোম্যান ঝটিকা অভিযান শুরুর দিনকে ‘একটি ভালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অভিযান ‘মোড় বদলে’ দেওয়ার মতো একটি ঘটনা।
ওই সাক্ষাৎকারের সময় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ছিলেন টম হোম্যান। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে (অবৈধ অভিবাসন) পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছেন। শিকাগোর জননিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ওপর নজর রাখতে আজ আমরা সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আইসিই লিখেছে, রোববার দেশজুড়ে ৯৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শিকাগোয় এই ‘বাড়তি অভিযান’ ছাড়াও আটলান্টা, পুয়ের্তো রিকো, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলেস, অস্টিন ও টেক্সাস শহরে অভিবাসনসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আইসিইর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিদিন ৭৫ জনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতিদিন গড় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়বে। গত অর্থবছরে আইসিইর অভিযানে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে প্রতিদিনি গ্রেপ্তারের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার তথ্য অস্বীকার করেছেন টম হোম্যান।
এদিকে শিকাগোয় ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এ তথ্য জানিয়েছে। রোববার শুরু হওয়া এই অভিযানে আইসিইর পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। এই অভিযান এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাঁদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা–বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে।
সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?’
এদিকে শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বলা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাক্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একই সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরের উপকণ্ঠ থেকে ওয়াল্টার ভালাদারেস নামের ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন আইসিইর সদস্যরা। তিনি হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তবে তাঁর বৈধ কোনো নথিপত্র নেই। সিএনএনকে ওয়াল্টারের পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াল্টারের ভাই এডউইন ভালদারেস বলেন, ওয়াল্টার নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আটলান্টার উপকণ্ঠে লিলবার্ন এলাকায় চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। ওয়াল্টারের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ নেই। একবার শুধু লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সে ঘটনায় জরিমানাও পরিশোধ করেছিলেন তিনি।
আটলান্টার উপকণ্ঠে টাকার এলাকা থেকে নথিপত্রহীন আরেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি একটি গির্জায় ছিলেন। ওই গির্জার যাজক লুইস ওরতিজ সিএনএনকে বলেন, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে তিনি দেখতে পান গির্জার কয়েকজন সদস্য ওই ব্যক্তিকে বাইরে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইরে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেন আইসিই সদস্যরা।
রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁদের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান চলছে। এই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু শহরের অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করেছেন ডিইএ ও আইসিই সদস্যরা। ডিইএ জানিয়েছে, রোববার সকালে কলোরাডোয় মাদক চোরাচালানিদের এবং ভেনেজুয়েলার অপরাধী চক্রগুলো লক্ষ্য করে চালানো অভিযানে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
টার্গেটে স্টুডেন্ট ভিসাধারীরা : অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযানে স্টুডেন্ট ভিসায় আগতরাও টার্গেট হয়েছেন। ৩ বাংলাদেশি ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে। তারা ভার্সিটিতে না গিয়ে নিয়মিত কাজ করছিলেন।
এদিকে পিএইচডি কোর্স করতে ঢাকা থেকে জেএফকে অবতরণকারী আরেক স্টুডেন্টকে জেএফকে থেকেই ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের অফিসার জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই স্টুডেন্টের কাছে থেকে সদুত্তর না পাওয়ায় তার ভিসা বাতিল করে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়া হয়।
আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (সরকার বিষয়ক) এবং আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। ডেমক্র্যাটিক পার্টির লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী আরো জানান, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে ভিসা গ্রহণের সময় উল্লেখিত তথ্যের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন জেএফকে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস অফিসার। সঠিক জবাব পাননি। অপরদিকে, স্টুডেন্ট ভিসা লংঘন করে নিয়মিতভাবে কাজ করার তথ্য উদঘাটিত হয় সংশ্লিষ্টদের সেলফোন ট্র্যাকিংয়ে। ভার্সিটি অথবা কলেজের পরিবর্তে ভিন্ন একটি স্থানে প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় অবস্থানের তথ্য খতিয়ে দেখার সময় উদঘাটিত হয় ভিসা বাতিলের অপকর্ম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় আগত অনেক এশিয়ানই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট কিংবা ট্র্যাভেল এজেন্সি অথবা চিকিৎসকের প্রাইভেট ক্লিনিকে রিসিপশনিষ্টের কাজ করছেন। কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করছেন। অবৈধ অভিবাসীদের ধর-পাকড়ের অভিযানে এহেন অপকর্মে লিপ্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’রাও ধরা পড়ছেন বলে নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেট্্স, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান, আরিজোনা থেকে জানা গেছে।
এদিকে, আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজের এক বুলেটিন বলা হয়েছে, সোমবার টেক্সাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮৪ জনসহ সারা আমেরিকা থেকে এক হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ৭ দিনে গ্রেফতারস হলো ৩৩ অবৈধ অভিবাসী। এরা সকলেই নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল এবং সামাজিক শান্তি বিনষ্টের হুমকি বলেই অবৈধদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিটে হেকসেথ জানান, সোমবার আরো ৪ শতাধিক সৈনিক টেক্সাসের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। এরফলে আগের সপ্তাহের তুলনায় বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারির সংখ্যা ৯০% কমেছে বলেও দাবি করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
আইসের গ্রেফতার-অভিযানে সন্ত্রস্ত গোটা কম্যুনিটি। জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজোনপার্ক, ব্রুকলীনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত পরিভ্রমণকারে সোমবার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেট, গ্রোসারি স্টোরে গ্রহকের মত বিক্রেতার সংখ্যাও একেবারেই নগন্য মনে হয়েছে। একধরনের ভীতি তৈরী হয়েছে ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটিতে। টাইমস স্কোয়ার, ডাউন টাউন, মিডটাউন, আপটাউনের ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জানা গেছে, নিউ ইয়র্কে নূন্যতম মজুরি হচ্ছে ঘন্টায় ১৭ ডলারের মত। অবৈধদের দিয়ে সে সব কাজ করিয়ে ঘন্টায় ৫/৬ ডলার করে দিতে পারায় ব্যবসায় মুনাফা বেশী বলে ব্যবসায়ীরা জানান। যদিও করোনা মহামারির পর অন্যসকল পন্যের মত খাদ্য-বস্ত্র-বিনোদনের সকল পন্যের দামও দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধদের দিয়ে ব্যবসা চালাতে না পারলে লাভের অংক অনেক কমবে বলে ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের ওপর নাখোশ।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্যে সেনাবাহিনীর বিমান ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে ডিটেনশন সেন্টারের ৪১ হাজার বেডই পূরণ হয়ে আছে আগে থেতেই। এজন্য গ্রেফতারের পরই অবৈধ অভিবাসীদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার এই কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আরো উল্লেখ্য, ১৭ লাখের অধিক অভিবাসীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। এর সাথে যোগ হয়েছে গত চার বছর বাইডেন-কমলার আমলে বেআইনীভাবে সীমানা অতিক্রমকারিরা। এ সংখ্যা ২০ লাখের বেশী বলে বিভিন্নভাবে জানা গেছে। এদের সকলকে গ্রেফতার এবং দ্রুত বহিষ্কার করা সম্ভব না হলে বিপুল অর্থ লাগবে থাকা-খাওয়া বাবদ। সে ইস্যুতেও দুশ্চিন্তায় রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে যারা সীমানা অতিক্রমের পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন-তাদেরকেও সরাসরি মেক্সিকো-তে পাঠিয়ে দেয়া হবে আবেদনের চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত। সবকিছু মিলিয়ে সারা আমেরিকায় অভিবাসী-সমাজে টেনশন আর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনথিভুক্ত অভিবাসী সবাই ‘অপরাধী’: হোয়াইট হাউস
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী সমস্ত অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ‘অপরাধী’ বলে মনে করছেন ট্রাম্প প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট। তিনি বলেন ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন দমনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাদের দৃষ্টিতে সকল অনথিভুক্ত অভিবাসীই ‘অপরাধী।
তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই ব্যাখ্যাটি জটিলতার অভাবযুক্ত এবং সম্ভবত সংবিধানের লঙ্ঘন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিটকে প্রশ্ন করা হয় এখন পর্যন্ত কতজন অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করা হয়েছে? যাদের অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে।
এর জবাবে তিনি বলেন,তাদের সবাই কারণ তারা অবৈধভাবে এসে আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করেছেন। আইসিইর তথ্যমতে ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৩,১০৪ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে।
অবিভাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই) জানিয়েছে যে ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রায় ৩,১০৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে যাদেরকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সন্দেহে আটক করা হয়েছে।
এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘লেকেন রাইলি আইন’-এ স্বাক্ষর করতে চলেছেন। এই নতুন আইন অনুসারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এখন এমন অনথিভুক্ত অভিবাসীদের আটক করতে পারবে। যারা বাড়িঘর ভাঙচুর, চুরি, ছিনতাই বা দোকান থেকে মালামাল চুরির মতো অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে।
তবে অভিবাসন আইনজীবী অ্যারন রাইখলিন-মেলনিক ব্যাখ্যা করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে অনুমতি ছাড়া থাকা একটি নাগরিক আইন লঙ্ঘন হলেও এটি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নয়।
তিনি ২০১২ সালের সুপ্রিম কোর্টের ‘অ্যারিজোনা বনাম ইউনাইটেড স্টেটস’ মামলার রায়ের উল্লেখ করেন। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে:
‘সাধারণত একজন অপসারণযোগ্য অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কোনো অপরাধ নয়।
যদি কোনো অনথিভুক্ত অভিবাসী তার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন তবে তাকে নির্বাসনের (ডিপোর্টেশন) মুখোমুখি হতে হতে পারে। তবে তাকে অপরাধমূলকভাবে অভিযুক্ত করা হবে না।
অভিবাসন আইনজীবী অ্যারন রাইখলিন-মেলনিক আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে, অপরাধমূলক রেকর্ড’ বলতে আইনগতভাবে এমন কাউকে বোঝানো হয়, যিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
এর মানে হলো যে কেউ অপরাধের জন্য তাত্ত্বিকভাবে গ্রেফতার হতে পারেন কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইনের দৃষ্টিতে তিনি তখন পর্যন্ত অপরাধমূলক রেকর্ডধারী নন। যতক্ষণ না তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই নীতি অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৮ ইউ.এস. কোড § ১৩২৫ অনুযায়ী, সীমান্ত অবৈধভাবে অতিক্রম করা একটি ফেডারেল অপরাধ। যার জন্য জরিমানা এবং কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল অনথিভুক্ত অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসেননি।
অনেকেই আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশটি না ছাড়ার কারণে অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হয়েছেন।
২০১৭ সালের একটি মাইগ্রেশন স্টাডিজ সেন্টারের প্রধান গবেষণায় দেখা গেছে ২০০৭ সাল থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়া ব্যক্তিদের চেয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ করেও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন, যা সীমান্ত অবৈধভাবে পার হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যার চেয়েও বেশি।
একটি ২০২৩ সালের ইমিগ্রেশন স্টাডিজ সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২২ সালে মোট ভিসা ওভারস্টে রেট ছিল ৩.৬৪%, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এই গবেষণাটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে।
বিপি।এসএম