আবু সাবেত: অসাংবিধানিক পন্থায় অবৈধ অভিবাসীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কসহ ১৯টি অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি। স্থানীয় সময় বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) তিনি এ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। ২০১৯ সালের একটি রাজ্য আইনের অধীনে অভিবাসীরা তাদের আইনগত অবস্থান নির্বিশেষে রাজ্য-প্রদত্ত ড্রাইভারের লাইসেন্স পেতে পারেন। তবে নিউ ইয়র্ক একমাত্র রাজ্য নয় যেখানে এমন আইন কার্যকর রয়েছে।
ন্যাশনাল কনফারেন্স অব স্টেট লেজিসলেচারের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৯টি রাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া একই ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে। এগুলো সাধারণত ‘গ্রিন লাইট’ বা ‘ড্রাইভ ওনলি লাইসেন্স’ আইন নামে পরিচিত। কিছু রাজ্যে কয়েক দশক ধরে কার্যকর রয়েছে।
এই আইনের বিস্তারিত বিষয়বস্তু রাজ্যভেদে ভিন্ন হতে পারে। যেমন ড্রাইভারের তথ্য ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাগ করা যাবে কি না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বন্ডি নিউ ইয়র্কের আইনকে ‘অবৈধ অভিবাসনের জন্য সবুজ সংকেত’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে বন্ডি তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে ফেডারেল সরকার নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এবং গভর্নর ক্যাথি হোকুলের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করেছে।
যদিও আইনটি রাস্তার নিরাপত্তা উন্নত করা ও অভিবাসী চালকদের জন্য বীমা পাওয়া সহজ করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল, তবু বন্ডি দাবি করেন যে, এতে একটি ধারা রয়েছে যা ফেডারেল অভিবাসন সংস্থা কোনো তথ্য চাইলে লাইসেন্সধারীদের জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
বন্ডি বলেন এটি অবৈধ অভিবাসীদের আগাম সতর্ক করা এবং এটি অসাংবিধানিক।এ কারণেই আমরা এই মামলা করেছি।
নিউ ইয়র্ক ছাড়াও, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, কানেকটিকাট, ডেলাওয়্যার, হাওয়াই, ইলিনয়, মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোটা, নেভাডা, নিউ জার্সি, নিউ মেক্সিকো, ওরেগন, রোড আইল্যান্ড, উটাহ, ভারমন্ট, ভার্জিনিয়া এবং ওয়াশিংটনে এই আইন কার্যকর রয়েছে।
ওয়াশিংটনের আইনটি সবচেয়ে পুরনো, যা ১৯৯৩ সালে চালু হয়েছিল এবং সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর (এসএসএন) না থাকলেও বাসিন্দাদের বিকল্প নথি, যেমন ইউটিলিটি বিল বা কর শনাক্তকরণ নম্বর প্রদান করার অনুমতি দেয়।
মিনেসোটা ২০২৩ সালে নতুন আইন পাস করে। সেখানে আবেদনকারীদের আর বৈধ উপস্থিতির প্রমাণ দিতে হয় না। আনুমানিক ৮১,০০০ মানুষ এই পরিবর্তনের আওতায় এসেছে। তবে আবেদনকারীদের অবশ্যই বৈধ বিদেশি পাসপোর্ট বা বিদেশি জন্ম সনদ জমা দিতে হবে।
রাজ্য আইনের অধীনে মিনেসোটা ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে না।
এগুলো সাধারণ ড্রাইভারের লাইসেন্সের মতো না। ড্রাইভ-ওনলি লাইসেন্সধারীদের সাধারণত রাস্তার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে পরীক্ষা দেওয়া লাগে। তবে এই লাইসেন্স ফেডারেল বা কখনও কখনও রাজ্য পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি নেই এবং ভোট দেওয়ার জন্যও বৈধ নয়।
উদাহরণস্বরূপ, কানেকটিকাটের ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিকলস তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই লাইসেন্স শুধুমাত্র গাড়ি চালানো এবং গাড়ি নিবন্ধনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
কিছু রক্ষণশীলদের মতে, এই লাইসেন্স অবৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং কিছু রাজ্যে এটি ভোট জালিয়াতির সুযোগ করে দিতে পারে বলে তারা মনে করেন।
সাবেক ম্যাসাচুসেটস গভর্নর চার্লি বেকার ২০২২ সালে এই আইনটি ভেটো করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটি মোটর যানবাহন রেজিস্ট্রি অফিসকে এমন ব্যক্তিদের জন্য রাজ্য পরিচয়পত্র ইস্যু করার নির্দেশ দেয়, যাদের পরিচয় যাচাই করার কোনো উপায় নেই।
তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, একটি সাধারণ ম্যাসাচুসেটস ড্রাইভারের লাইসেন্স আর এই নিশ্চয়তা দেবে না যে ব্যক্তি আসলেই সেই ব্যক্তি।
তবে আইনসভা বেকারের ভেটো বাতিল করে এবং পরে রাজ্যব্যাপী ব্যালট ভোটে জনগণও এই আইন বহাল রাখার পক্ষে সমর্থন জানায়।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম