নোমান সাবিত: অবশেষে ইলন মাস্কের সেই আদেশ থেকে ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত পিছু হটছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। সাম্প্রতি মাস্ক সব ফেডারেল কর্মীদের দিনের শেষের মধ্যে একটি ইমেইল পাঠিয়ে তাদের সাপ্তাহিক অর্জন জানাতে বা পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলের মধ্যে কর্মীদের ইমেইলের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে অফিস অফ পারসোনেল ম্যানেজমেন্ট (ওপিএম)। এতে স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে প্রশাসনের ভেতরেই কেউ কেউ মনে করছেন মাস্ক সীমা অতিক্রম করেছেন।
মাস্কের এই বার্তাটি তার ২০২২ সালে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) অধিগ্রহণের সময় ব্যবহৃত কৌশলটির অনুরূপ ছিল এবং এটি হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীদের জন্য এক বিশৃঙ্খল সপ্তাহান্ত তৈরি করেছিল। ফেডারেল সংস্থাগুলোর ট্রাম্প-সমর্থিত নেতৃত্ব, যেমন এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল, তাদের কর্মীদের আদেশটি উপেক্ষা করতে বলেন এবং জানান যে তারা নিজেরাই কর্মীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কংগ্রেসের রিপাবলিকানরাও মাস্কের সমালোচনা করে তাকে অনুপযুক্ত বলেছেন।
সিনেটর শেলি মুর ক্যাপিটো (আর-ডব্লিউভি) বলেন, আমি মনে করি না এটি খুব ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে বিশেষ করে এটি ছিল আকস্মিক এবং এর উদ্দেশ্যও স্পষ্ট ছিল না।
সিনেটর সুসান কলিন্স (আর-মেইন) বলেছেন, এই দাবি মাস্কের এখতিয়ারের বাইরে ছিল। আমি খুশি যে কিছু নতুন সংস্থা ও বিভাগ প্রধানরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এটি মাস্কের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, মাস্কের দায়িত্বজ্ঞানহীন যোগাযোগ এবং সংস্থাপ্রধানদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার ফেডারেল কর্মীরা ওপিএম থেকে তিন বাক্যের একটি ইমেইল পান। সেখানে তাদেরকে সোমবার রাত ১১:৫৯ পিএম (ইস্টার্ন টাইম) এর মধ্যে পাঁচটি মূল পয়েন্টে তাদের কাজের বিবরণ দিতে বলা হয়।
এক্স-এ একটি পোস্টে, মাস্ক ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)-এর মাধ্যমে সরকারি ব্যয় ট্রিলিয়ন ডলার কমানোর প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সতর্ক করেন যে ইমেইলের উত্তর না দিলে সেটি ‘পদত্যাগ’ হিসেবে গণ্য হবে। তবে, সোমবার বিকেলে ওপিএম নতুন নির্দেশনায় জানায়, এই ইমেইলের উত্তর দেওয়া সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসাধ্য, যা মাস্কের হুমকিকে দুর্বল করে দেয়।
সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, মাস্ককে সমর্থন করে তিনি এতদিন এই ইস্যুতে নীরব ছিলেন। এতে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা আছে। আমরা জানতে চাই মানুষ কাজ করছে কিনা, তাই আমরা একটি চিঠি পাঠিয়েছি, ‘আপনি গত সপ্তাহে কী করেছেন?’ যদি কেউ উত্তর না দেয়, তাহলে হয়তো সে ব্যক্তি বাস্তবে নেই বা কাজ করছে না।’
তবে ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার (ডি-ভিএ) এটিকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে অভিহিত করেছেন। ওয়ার্নার বলেন ‘ওপিএম পরিচালক রাসেল ভোট কর্মীদের আতঙ্কিত করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তা খুব ভালোভাবেই করছেন’।
একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাস্কের সব পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, হোয়াইট হাউস চিফ অফ স্টাফ সুসি ওয়াইলস এবং অন্যান্য সিনিয়র উপদেষ্টাদের সাথে সমন্বয় করেই নেওয়া হয় এবং মাস্কের অনুরোধগুলো আসলে প্রেসিডেন্টের প্রত্যক্ষ নির্দেশ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত।
তবে কিছু সংস্থা যেমন এফবিআই এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তার কারণে সংবেদনশীল তথ্য ইমেইলে পাঠানোর নিয়মের আওতায় পড়ে না, তাই তারা স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল কর্মীদের বলেছেন, ‘যখন এবং যদি আরও তথ্য প্রয়োজন হয়, তখন আমরা এটি সমন্বয় করবো। আপাতত, দয়া করে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।’
এফবিআই ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ মামলার সম্মুখীন, কারণ বিচার বিভাগ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি সংক্রান্ত ৫,০০০ এজেন্টের কাজের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ, বিচার বিভাগ, এবং পেন্টাগনও তাদের কর্মীদের ইমেইলের উত্তর না দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে কিছু ট্রাম্প-সমর্থিত কর্মকর্তা, যেমন পরিবহন সচিব শন ডাফি, মাস্ককে সমর্থন করে নিজের পাঁচটি অর্জন এক্স-এ পোস্ট করেছেন।
এদিকে, আমেরিকান ফেডারেশন অফ গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এবং অন্যান্য ইউনিয়নগুলো প্রশাসনের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলাকে সম্প্রসারিত করে সোমবার একটি নতুন মামলা দায়ের করেছে, যেখানে মাস্কের হুমকির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মাস্ককে সরকারি ব্যয় কমানোর ব্যাপারে ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছে, যদিও আদালতে দাখিল করা এক নথিতে বলা হয়েছে, মাস্ক ডিওজিই-এর কর্মকর্তা নন বরং তিনি প্রেসিডেন্টের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউস অফিসের কর্মী।
মাস্কের নেতৃত্বে সরকারি ব্যবস্থাপনা বেসরকারি ব্যবসার মতো পরিচালনার যে চেষ্টা চলছে তা কার্যত সীমাবদ্ধতার মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতি রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪২ শতাংশ ভোটার ডিওজিই-এর কাজকে সমর্থন করেন। ৫৩ শতাংশ এর বিরোধিতা করেন। তবে ট্রাম্প অন্য এক জরিপের ফলাফল দেখিয়ে বলেছেন, ‘মাস্কের কাজ ব্যাপক জনপ্রিয়।’ এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেও মাস্কের নির্দেশ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম