Home আন্তর্জাতিক জাতিসংঘে ইউক্রেন সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৭ দেশের ভোট

জাতিসংঘে ইউক্রেন সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৭ দেশের ভোট

by bnbanglapress
A+A-
Reset

 

আবু সাবেত: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ১৭টি দেশ রাশিয়াকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিন্দা জানিয়ে একটি অ-কার্যকরী প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যা দুই বছর আগের অনুরূপ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) উক্ত ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থিত এই প্রস্তাব যদিও এর কোনো বাস্তব প্রয়োগ ক্ষমতা নেই, তা এখনও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে গৃহীত হয়েছে এবং রাশিয়ার অযৌক্তিক হামলা ও চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সংহতির প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। সোমবার ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের তৃতীয় বর্ষপূর্তি চিহ্নিত করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভোট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদের এক মাস পার করেও রাশিয়াকে এই যুদ্ধে দোষারোপ করতে অস্বীকার করেছেন। সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কড়া সমালোচনা করেছেন।তিনি বাইডেন প্রশাসনের সময় ব্যাপক প্রশংসিত ছিলেন।
সোমবার ট্রাম্প সংকেত দিয়েছেন যে তিনি আসন্ন সপ্তাহগুলোতে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।
২০২৩ সালে যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে জাতিসংঘের অনুরূপ ভোটে সাতটি দেশ যার মধ্যে রাশিয়াও ছিল। একটি অ-কার্যকরী প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল যেখানে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয় এবং চলমান সংঘাতের জন্য ক্রেমলিনকে দোষী করা হয়। সোমবারের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আগের সমস্ত প্রস্তাবে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
এই বৈঠকের আগের সপ্তাহগুলোতে শুধু ইউক্রেনের খসড়া প্রস্তাব বিবেচনায় ছিল, যেটা ১৯৩-সদস্যের সংস্থায় অতীতে পাস করা প্রস্তাবকে প্রতিফলন করে। এই প্রস্তাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের উল্লেখ ছিল এবং জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে ন্যায্য এবং টেকসই শান্তির আহ্বান জানানো হয়।
এরপর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব খসড়া নিয়ে আসে, যার শিরোনাম ছিল- শান্তির পথ, যেখানে দ্রুত সংঘাত অবসানের আহ্বান জানানো হয় এবং রাশিয়ান ফেডেরেশন এবং ইউক্রেনের মধ্যে টেকসই শান্তির আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের কথা বলা হয়নি।
জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের খসড়াকে একটি ভালো পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন।
শান্তির পথে গতি অর্জন করার জন্য এটা আমাদের সুযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব যাতে যুদ্ধের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ইউক্রেনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের ক্ষতি না করতে পারে, সেই পথ বের করার জন্য ইউরোপীয় কূটনীতিকরা সপ্তাহান্তে বৈঠক করেন। সোমবার তারা যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় তিনটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেন। সব সংশোধনী সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়।

তারা যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় নতুন ভাষা যোগ করেন। তারা রুশ-ইউক্রেন সংঘাত শব্দগুলোর বদলে ইউক্রেনে রাশিয়ান ফেডেরেশনের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন যোগ করেন। একটি নতুন প্যারাগ্রাফ ঢুকানো হয় যেখানে বলা হয়, ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের ভেতরে, রাষ্ট্রীয় জলসীমা সহ, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং একতার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্নিশ্চিত করছে। এই প্যারাগ্রাফে জাতিসংঘ সনদ এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা সমর্থন করে ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংশোধিত প্রস্তাব যখন ভোটে দেওয়া হয়, ওয়াশিংটন তাদের নিজেদের প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থাকে। পাস হওয়া প্রস্তাবে ৯৩ রাষ্ট্র পক্ষে, ১৭ বিপক্ষে ভোট দেয় এবং ৭৩টি রাষ্ট্র ভোট দানে বিরত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ডরোথি শেয়া বলেন,এই সংশোধনীগুলো যুদ্ধ বন্ধ না করে বাকযুদ্ধ চালাতে চায়।
রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ার বিপক্ষে ভোট দেয়। কারণ, তাদের ভাষায়, সংঘাতের মূল কারণগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রস্তাবের ভাষা পরিবর্তন করতে তাদের সংশোধনী পরিষদ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আসল লক্ষ্য বিকৃত হয়ে গেছে, রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এটার পরে অন্যান্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আমার মনে হয়, আজকের পর আমাদের আমেরিকান সহকর্মীরা নিজেরাই দেখতে পেয়েছেন যে, ইউক্রেনে শান্তির পথ সহজ হবে না, এবং এখানে অনেকেই আছে যারা নিশ্চিত করবে যে যত দিন সম্ভব তত দিন যাতে শান্তি না আসে, নেবেনজিয়া বলেন।
ইউক্রেনের প্রস্তাবের পক্ষে ছিল ৯৩ রাষ্ট্র, ১৭ বিপক্ষে এবং ৬৫ রাষ্ট্র ভোট দানে বিরত থাকে। যুদ্ধের তিন বছরে সাধারণ পরিষদে এটাই ছিল ইউক্রেনের পক্ষে সবচেয়ে দুর্বল সমর্থন।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়, যেমন দেয় রাশিয়া, তার মিত্র বেলারুশ এবং উত্তর কোরিয়া, কয়েকটি আফ্রিকান দেশ, ইউরোপের হাঙ্গেরি এবং ইসরাইল।
সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব মানতে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তার নৈতিক মূল্য রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মূল খসড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সোমবার পরের দিকে ভোটের জন্য পেশ করবে। অনুমোদনের জন্য ১৫ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৯ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে, তবে যদি স্থায়ীয় সদস্যদের – ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র – কেউ ভেটো না দেয়।
সোমবারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাশাপাশি ভোট দেওয়া ১৬টি দেশ হল: ইসরায়েল, হাইতি, হাঙ্গেরি, পালাউ ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ; আফ্রিকার দেশগুলি বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, নাইজার ও সুদান,বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, ইরিত্রিয়া, মালি ও নিকারাগুয়া। যেগুলোর মধ্যে ছয়টি দেশ ২০২৩ সালের প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও ভোট দিয়েছিল।
৬৫টি দেশের মধ্যে চীনও ভোটদান থেকে বিরত ছিল। তবে সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক ভিডিও কলে কথা বলার পর মস্কোর প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে শির বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছে ইতিহাস ও বাস্তবতা আমাদের দেখায় যে চীন ও রাশিয়া ভালো প্রতিবেশী। তারা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাবে না এবং সত্যিকারের বন্ধু। তারা সুখ-দুঃখে একসঙ্গে থেকেছে, একে অপরকে সমর্থন দিয়েছে এবং একসঙ্গে উন্নতি করেছে।

[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

বিপি।এসএম

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী