মিনারা হেলেন: প্রায় এক মাস আগে বেশিরভাগ আমেরিকানদের রবিবারের মূল্যবান ঘুম থেকে এক ঘণ্টা কমে গিয়েছিল কারণ ডেলাইট সেভিং টাইম শুরু হওয়ায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবারও যুক্তরাষ্ট্র সেই পুরোনো ‘অপ্রাসঙ্গিক প্রথা’ বন্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেনেটের কমার্স, সায়েন্স অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন কমিটি বৃহস্পতিবার একটি শুনানি আয়োজন করেছে, যার শিরোনাম ‘যদি সময়কে ফেরানো যেত: আমরা কি ঘড়ির কাঁটা স্থির করে দেব?’ -এই শুনানিতে প্রতি বছর সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া ও পিছিয়ে নেওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান-টেক্সাস) এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঘড়ি পরিবর্তনের এই পুরনো প্রথা আমেরিকানদের ব্যবসা, স্বাস্থ্য এবং সুখে প্রকৃত প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে ছোট শিশুদের অভিভাবকদের ক্ষেত্রে। উভয় রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আগেও ‘ঘড়ি স্থির করা’র উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন এবং এই সময় পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা আমার কাছে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি বিষয়।’
২০২৫ সালের ডেলাইট সেভিং টাইম: কোন কোন রাজ্য ‘ঘড়ি স্থায়ী করার’ চেষ্টা করছে?
এই শুনানিতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকবেন—ইনস্যুরেন্স ইনস্টিটিউট ফর হাইওয়ে সেফটি, আমেরিকান একাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন, ন্যাশনাল গলফ কোর্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, এবং ‘লক দ্য ক্লক মুভমেন্ট’-এর প্রতিনিধিরা, যারা আগেও সময় পরিবর্তন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও এটি শুধুমাত্র একটি শুনানি, আইন পাশ নয়, তবে এটি ইঙ্গিত হতে পারে যে কংগ্রেস এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
ডেলাইট সেভিং টাইম স্থায়ী করার জন্য কংগ্রেসে কয়েকটি সমান্তরাল বিল আনা হয়েছে। এর একটি সিনেটর ক্রুজের কমিটিতে পাঠানো হয়েছে, আরেকটি বিল রাজ্যগুলোকে সারা বছর ডেলাইট সেভিং টাইম পালন করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাইট সেভিং টাইম নিয়ে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মিশ্র ইতিহাস রয়েছে। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৮ সালে চালু হয়, কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে এটি আবার চালু হয়, যদিও তখনকার সময় তা বেশ বিশৃঙ্খল ছিল। ১৯৬৬ সালে মৌসুমি সময় পরিবর্তনের নিয়ম চালু হয়, কিন্তু ৭ বছর পরে জাতীয় জ্বালানি সংকটের কারণে আবারও সারা বছর ডেলাইট সেভিং টাইম পালন করা হয়।
যদি আমরা ডেলাইট সেভিং টাইমে ‘স্প্রিং ফরোয়ার্ড’ না করতাম?
প্রথমে আমেরিকানরা এটি সমর্থন করলেও, শীতের অন্ধকার সকালগুলোতে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। ফলে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আবার বছরে দুইবার সময় পরিবর্তনের নিয়মে ফিরে যায়, এবং সেই নিয়মই এখনও চালু রয়েছে।
গত কয়েক বছরে ডেলাইট সেভিং টাইম স্থায়ী করার বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যদিও অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। তারা বরং স্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড টাইমের পরামর্শ দেন, কারণ এতে সকালে বেশি সূর্যের আলো পাওয়া যায় যা ঘুম এবং দেহঘড়ির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ফলাফলের সাথেও যুক্ত।
যেসব রাজ্য সময় পরিবর্তন নিয়ে আইন প্রস্তাব করেছে, তারা মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত—একদল স্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড টাইম চায়, আরেক দল স্থায়ী ডেলাইট সেভিং টাইম।
মাত্র দুটি রাজ্য সারা বছর স্ট্যান্ডার্ড টাইম পালন করে, যা কংগ্রেসের ১৯৬৬ সালের ইউনিফর্ম টাইম অ্যাক্ট অনুযায়ী বৈধ। তবে রাজ্যগুলো স্থায়ী ডেলাইট সেভিং টাইম বেছে নিতে পারে না, যদি না কংগ্রেস আইন পরিবর্তন করে।
ডেলাইট সেভিং টাইম স্থায়ী হলে কী পরিবর্তন আসবে?
একটি হাউজ বিল রাজ্যগুলোকে সারা বছর ডেলাইট সেভিং টাইম মানার ক্ষমতা দিতে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে একাধিক রাজ্যে তাদের চলতি আইনসভা অধিবেশনে স্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড টাইম চালুর অথবা ডেলাইট সেভিং টাইম থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য বিল আনা হয়েছে। এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত কোনো বিল পাশ হয়নি।
বর্তমানে ডেলাইট সেভিং টাইম নিয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সময় ডেলাইট সেভিং টাইম শেষ করার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু মার্চে তিনি বলেন তিনি এটি নিয়ে চাপ প্রয়োগ করবেন না কারণ এটি একটি “৫০/৫০ ইস্যু’।
ট্রাম্প বলেন, ‘এটা একটা ৫০/৫০ বিষয়, আর যখন কোনো বিষয় এতটা সমানভাবে বিভক্ত, তখন সেটা নিয়ে উৎসাহী হওয়া কঠিন।’
ডেলাইট সেভিং টাইম সংক্রান্ত শুনানি বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, সকাল ১০টা (ইস্টার্ন টাইম) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম