মিনারা হেলেন: নিউ ইয়র্ক শহরে ইহুদিদের ওপর তিনটি হামলার ঘটনায় জড়িত এক উগ্রপন্থী ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভকারীকে ঘৃণাজনিত ফেডারেল অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটররা।
২০ বছর বয়সী তারেক বাজরুক-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্তত তিনজন ইহুদি নাগরিকের ওপর হামলা চালিয়েছেন। বিচারক স্টুয়ার্ট অ্যারন তাকে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসিকিউটরদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রতি তার সমর্থন, ইহুদিদের প্রতি প্রকাশ্য ঘৃণা এবং সহিংস হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের অতীত রয়েছে।’
প্রথম ঘটনার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ঘুষি মেরে তার কাছ থেকে ইসরায়েলের পতাকা ছিনিয়ে নেন বাজরুক এবং ইহুদিবিদ্বেষী গালিগালাজ করেন।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরোধী এক বিক্ষোভ চলাকালে, যেখানে বাজরুক এক ব্যক্তিকে লাথি মারেন এবং বলেন, ‘নিজেকে মেরে ফেলো।’ পরে তিনি এক বন্ধুকে পাঠানো টেক্সটে লেখেন: ‘আমি ওই জায়নিস্টকে লাথি মারা শুরু করি কারণ তারা ‘ইউএসএ’ নিয়ে কথা বলছিল।’
তৃতীয় হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি, যখন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে আরেকটি বিক্ষোভ চলাকালে বাজরুক ফার্স্ট অ্যাভিনিউ ও ইস্ট ১৮তম স্ট্রিটে এক ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভকারীকে ঘুষি মারেন বলে অভিযোগ।
বাজরুক নিউ ইয়র্ক পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি অফিস তার বিরুদ্ধে রাজ্য পর্যায়ের ঘৃণাজনিত অপরাধ, ডাকাতি ও হামলার অভিযোগ দায়ের করে। তবে তার নিয়োজিত সরকারি আইনজীবী ডায়ান একারম্যান এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বুধবার সকালে এফবিআই বাজরুককে ফেডারেল অভিযোগে গ্রেফতার করে। প্রসিকিউটরদের দাবি, তিনি এর আগেও নিউ ইয়র্কের একটি স্কুলে এক ইহুদি শিশুকে হুমকি দিয়েছিলেন।
কার্যনির্বাহী মার্কিন অ্যাটর্নি জে ক্লেটন বলেন, “প্রতিটি ঘটনার পরই গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও বাজরুক থেমে থাকেননি, বরং বারবার ইহুদিদের লক্ষ্য করে সহিংসতা চালিয়ে গেছেন।”
বাজরুকের বাসা তল্লাশির সময় এফবিআই ব্রাস নকেল, একটি শিকারি ছুরি, একটি এয়ারসফট গান, প্রকৃত গুলি এবং কয়েক লক্ষ ডলার নগদ অর্থ উদ্ধার করে। কিছু ছবিতে তাকে ‘সাধারণত হামাস সন্ত্রাসীরা যে সবুজ হেডব্যান্ড পরে’ তা পরা অবস্থায় দেখা গেছে বলে প্রসিকিউটররা দাবি করেন।
এফবিআই নিউ ইয়র্কের পরিচালক ক্রিস্টোফার রাইয়া বলেন, ‘বাজরুক দফায় দফায় ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে শারীরিক হামলা চালিয়েছেন।’
তার মোবাইল ফোনে হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থনের বার্তা এবং নিজের পরিচয় ‘জু হেটার’ বা ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে উল্লেখ করা লিখিত বার্তা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।
একটি হামলার ঘটনার পর নিউ ইয়র্ক গভর্নর ক্যাথি হোকুল এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘আমি ক্ষুব্ধ যে কলম্বিয়ার একজন শিক্ষার্থীকে ইহুদিবিদ্বেষী হামলার শিকার হতে হয়েছে… আমরা নিশ্চিত করব হামলাকারীকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে এবং নিউ ইয়র্কের সব নাগরিক নিরাপদ থাকবেন।
বাজরুকের বিরুদ্ধে তিনটি ফেডারেল ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, প্রতিটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তার বিরুদ্ধে আগেও প্রায় ১০টি গ্রেফতারি রেকর্ড আছে, যার বেশ কিছু মাদক সংক্রান্ত।
বেশ কয়েকটি ইহুদি অনলাইন গ্রুপ দাবি করেছে, বাজরুক “উইদিন আওয়ার লাইফটাইম” (ডাব্লিউওএল) নামের একটি বিক্ষোভ গ্রুপের সদস্য। গ্রুপটি তাদের ওয়েবসাইটে ইসরায়েলকে “জায়নিস্ট বসতি-উপনিবেশ প্রকল্প” হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে “ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য প্রয়োজনে যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে।” একই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বজুড়ে মার্কিন ‘সাম্রাজ্যবাদী সহিংসতা’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম
