আবু সাবেত: যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের প্রচলিত ব্যাখ্যা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগ এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টে উঠছে। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় প্রশাসনিক পদক্ষেপ, যা বিচারপতিরা সরাসরি বিবেচনায় নিচ্ছেন।
তবে আপাতত সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ যা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বিদেশি নাগরিকদের সন্তানদের স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব বন্ধ করার কথা বলে—এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে রায় দিচ্ছে না। প্রশাসন কেবল কয়েকটি জেলা আদালতের দেশব্যাপী প্রযোজ্য অবরোধ হ্রাস করার অনুরোধ জানিয়েছে, যেগুলো তারা ‘অতিরিক্ত বিস্তৃত’ বলেই মনে করছে।
কিন্তু মামলাটি ইতিমধ্যেই আইনজ্ঞ মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের এই ঝাঁকুনি আদৌ আইনসম্মত কি না, তা নিয়ে রক্ষণশীল আইনজ্ঞরাও দ্বিধাবিভক্ত।
ক্ষমতায় ফিরে প্রথম দিনেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যাতে বলা হয়—যেসব শিশুর বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন না, তাদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। নির্বাচনী প্রচারে তিনি এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা হয়েছে, যার কয়েকটি এখন সুপ্রিম কোর্টের জরুরি বিবেচনায় আছে। ব্যতিক্রমধর্মীভাবে, বিচারপতিরা বৃহস্পতিবার মৌখিক শুনানির মাধ্যমে এই প্রশ্নে রায় দেবেন—নিম্ন আদালতগুলো আদেশ বাতিলের সময় পুরো দেশজুড়ে অবরোধ জারি করতে পারবে কি না।
তবে এই বিতর্কের পেছনে রয়েছে ১৪তম সংশোধনীর নাগরিকত্ব ধারা, যা বলছে—“যারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে এবং এর বিচারাধীন, তারা সবাই নাগরিক।” প্রচলিত ব্যাখ্যায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম মানেই নাগরিকত্ব—কিছু নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম ছাড়া।
রক্ষণশীল আইনজীবীদের একটি অংশ মনে করছেন, “বিচারাধীন” শব্দটি বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার। তাদের মতে, অননুমোদিত অভিবাসীদের সন্তানরা মার্কিন সার্বভৌম কর্তৃত্ব মেনে না নেওয়ার কারণে এই নাগরিকত্বের আওতায় পড়ে না।
আইন প্রফেসর কার্ট ল্যাশ লিখেছেন, অননুমোদিত অভিভাবকের সন্তানদের নাগরিকত্ব অনুমানমূলক হলেও তা খারিজ করা যায়—কারণ তারা এমন পরিবারের অংশ, যারা “প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে” মার্কিন কর্তৃত্ব অস্বীকার করে।
এই যুক্তির সমালোচনায় এগিয়ে এসেছেন প্রফেসর ইভান বার্নিক। তিনি বলেন, আদিবাসীদের সঙ্গে অভিবাসীদের সন্তানদের তুলনা ভুল। আদিবাসীদের মার্কিন আইনের অধীন করা যেত না, তারা চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হতেন। কিন্তু অননুমোদিত অভিবাসীরা ও তাদের সন্তানরা মার্কিন আইনের অধীন এবং তাদের নাগরিকত্ব না দিলে কোনো সুরক্ষাই থাকবে না।
বার্নিক ও ট্রাম্পপন্থী আইনজীবী ইলান ওয়ারম্যান এ নিয়ে সম্প্রতি ফেডারেলিস্ট সোসাইটির এক বিতর্কসভায় মুখোমুখি হন। ওয়ারম্যান বলেন, নাগরিকত্বের প্রচলিত ব্যাখ্যা চূড়ান্ত নয়; বার্নিক বলেন, “এটা স্পষ্টতই প্রতিষ্ঠিত সত্য”।
এই বিতর্কে বিচারপতিরাও প্রভাবিত হয়েছেন। পঞ্চম সার্কিটের বিচারপতি জেমস হো একসময় বলেছিলেন, “অননুমোদিতদের সন্তানদের নাগরিকত্ব ১৪তম সংশোধনীর অধীন নিশ্চিত।” কিন্তু সম্প্রতি তিনি মত বদলেছেন এবং বলেন, “দখলদার বিদেশিদের সন্তানদের নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবি কেউ কখনো করেননি।”
তবে বৃহস্পতিবারের শুনানিতে এই মূল প্রশ্ন আসছে না। বিচারপতিরা সিদ্ধান্ত নেবেন, আদেশ বাতিলের সময় নিম্ন আদালতগুলো পুরো দেশের জন্য অবরোধ দিতে পারে কি না, নাকি কেবল মামলার পক্ষভুক্তদের জন্য সীমিত রায়ই যথেষ্ট।
এই আপিল বড় এক সাংবিধানিক বিতর্কের দরজা খুলে দিয়েছে। ডজনখানেক রাজ্য, শতাধিক আইনপ্রণেতা, পণ্ডিত ও অধিকার সংগঠন আদালতে মতামত দিয়েছেন—যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব নিয়ে।
১৮০ জনের বেশি ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য এক বন্ধু আদালত বিবৃতিতে বলেন, “প্রেসিডেন্টকে সংবিধান মেনে চলতে হবে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে—এড়িয়ে যেতে নয়। আইন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্টকে বর্তমান আইন মানতে হবে।”
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম