মিনারা হেলেন: যুক্তরাষ্ট্রে আটক অবস্থায় থাকা এক ভেনেজুয়েলান শিশুকে অবশেষে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার মা–বাবাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পর শিশুটি সরকারের হেফাজতে ছিল।
দুই বছর বয়সী মাইকেলিস আন্তোনেলা এসপিনোসা বার্নাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি প্রত্যাবাসন ফ্লাইটে ভেনেজুয়েলার সিমন বোলিভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তাকে কোলে তুলে ধরেন ভেনেজুয়েলার ফার্স্ট লেডি সিলিয়া ফ্লোরেস।
ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলো বলেন, “আজ আমরা একটি বড় বিজয় অর্জন করেছি।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শিশুটিকে ফেরত চেয়ে দাবি জানিয়ে আসছিল এবং দেশটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘শিশু অপহরণের’ অভিযোগ তোলে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) আগেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং মেয়েটির ফেরতের পর আবারও জানায়, তারা মেয়েটিকে তার বাবা–মায়ের হাত থেকে রক্ষা করছিল, যাদের তারা ক্রিমিনাল গ্যাং ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ (টিডিএ)–এর সদস্য বলে সন্দেহ করে—যা যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।
ডিএইচএস-এর সহকারী মুখপাত্র ট্রিশা ম্যাকলাফলিন এক বিবৃতিতে বলেন, “শিশুটির মা ইওরেলি এসকার্লেথ বার্নাল ইনসিয়ার্তে ট্রেন দে আরাগুয়ার জন্য মাদক পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে তরুণীদের নিয়োগ দেন। শিশুটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় তাকে মায়ের সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়নি।”
তবে মা বার্নাল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ম্যাকলাফলিন আরও বলেন, শিশুটির বাবা মাইকার এসপিনোসা-এসকালোনা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এবং এল সালভাদরের সেসট (CECOT) নামক কুখ্যাত জেলখানায় বন্দি আছেন। ডিএইচএস দাবি করে, তিনি মাদক ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
তবে পিতা এসপিনোসা আদালতে দেওয়া এক হলফনামায় বলেছেন, তার শরীরের উল্কিচিহ্ন দেখে তাকে গ্যাং সদস্য হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে, যদিও তার ট্যাটুগুলোর সঙ্গে কোনো অপরাধী সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই।
ডিএইচএস জানায়, আদালতের আদেশে মেয়েটিকে ৩০২ দিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব রিফিউজি রিসেটেলমেন্ট (ORR)-এর হেফাজতে রাখার পর ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার দাবি, ২০২৫ সালের মার্চে শিশুটির বাবা এসপিনোসাকে এল সালভাদরের berথিত সিসট কারাগারে পাঠানো হয়। কিছুদিন পর মা বার্নালকেও দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তবে মেয়েকে সঙ্গে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মেয়েটিকে পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, যেখানে তাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে দেখা যায় মাকে—একটি আবেগঘন পুনর্মিলনের দৃশ্য।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, শিশুটিকে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে দেশটির সমন্বয় ছিল।
তিনি আরও বলেন, “আমাকে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত অ্যাম্বাসাডর রিচার্ড গ্রেনেলকে। তার চেষ্টায়ই মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও ধন্যবাদ জানাই।”
মাদুরো বলেন “মতভেদ থাকলেও, ঈশ্বরের আশীর্বাদে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব,” ।
একটি বিভক্ত পরিবার
আদালতের নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে মাসে শিশু ও তার বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করেন। তবে পরে বাবা-মাকে ইমিগ্রেশন ডিটেনশনে পাঠানো হয় এবং শিশু ওআরআরR-এর হেফাজতে চলে যায়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাবা ডিপোর্টেশনের আদেশ পান। এরপর থেকে মার্চ পর্যন্ত তারা প্রতি সপ্তাহে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেন।
মার্চের ২৯ তারিখে এসপিনোসাকে গুয়ানতানামো বে-তে পাঠানো হয়, যেখান থেকে তাকে এল সালভাদরের সিসট কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ডিএইচএস জানিয়েছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকলেও তারা অনেক ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে সহিংস গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে ঐ কারাগারে পাঠাচ্ছে।
শিশুর মা–কে কিছুদিন পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তবে শিশুটিকে ছাড়াই। ডিএইচএস জানায়, “আমরা কোনোভাবেই এই শিশুকে বিপজ্জনক অপরাধমূলক পরিবেশে ফেরত যেতে দেব না।”
সিএনএন–কে দেওয়া এক ইমেইলে ORR মেয়েটির হেফাজতের সময়কাল নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানায়, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে।
বার্নাল দাবি করেন, তার ট্যাটুগুলো পরিবারের সদস্যদের জন্মতারিখের স্মারক, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এগুলোকে অপরাধচিহ্ন হিসেবে দেখেন।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম