Home রাজনীতি নিম্ন আদালতে তারেক রহমান ও জুবাইদার বিচার নিরপেক্ষ হয়নি: হাইকোর্ট

নিম্ন আদালতে তারেক রহমান ও জুবাইদার বিচার নিরপেক্ষ হয়নি: হাইকোর্ট

by বাংলাপ্রেস ডেস্ক
A+A-
Reset

বাংলাপ্রেস ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুতর অসঙ্গতি ও আইনি ব্যত্যয়ের উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।

প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে, মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া ছিল অস্বাভাবিকভাবে তাড়াহুড়া করে সম্পন্ন করা। এছাড়া ডা. জুবাইদা রহমানকে কোনো নোটিশ ইস্যু না করেই বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অভিযোগ গঠনেও আইনগত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

হাইকোর্টের মতে, বিচারিক আদালতে দুই মাস চার দিনে ৪২ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া এবং সাক্ষ্য শেষে আট দিনের মধ্যে রায় দেওয়ার এমন দ্রুত গতি ও সমাপ্তি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস তৈরি করে যে, বিচার নিরপেক্ষভাবে হয়নি। গত ২৮ মে এই রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।

সোমবার (১৪ জুলাই) ওই রায়ের ৫২ পৃষ্ঠার অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। রায়ে ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর এই রায়ের সুবাদে তারেক রহমান দুই ধারায় মোট ৯ বছর সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, নথি থেকে জানা যায় যে, ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দুই মাস চার দিনের মধ্যে রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সাক্ষ্য নেওয়ার আট দিন পর অবিলম্বে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এত দ্রুত গতিতে বিচারের অগ্রগতি ও সমাপ্তি ব্যাপক বিশ্বাস তৈরি করে যে, এটি নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি।

দুদক আইনে ২৬ (১) ধারা অনুসারে নোটিশ দেওয়ার বিধান সম্পর্কে হাইকোর্ট বলেন, নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। যেহেতু কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি তাই তাকে (জুবাইদা রহমানকে) দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজা আইন অনুসারে টেকে না এবং এটা বাতিল যোগ্য। এছাড়া আপিলকারীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল তা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার বিধানগুলো পালন করা হয়নি। অতএব, এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা বহাল রাখা যায় না।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, সাক্ষী নং ১ এবং ৪২ এই দুজন ব্যতীত বাকি সকল সাক্ষীগণ জব্দ তালিকার সাক্ষী। তারা কেউই তারেক রহমান বা জুবাইদা রহমান জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এমন কথা বলেননি। অতএব সরকার পক্ষ মামলাটি তারেক রহমান এবং জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে পারেনি।

আপিল না করেও তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশর উচ্চ আদালতের নজির অনুসারে যেহেতু মামলায় নানা ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে, সেহেতু পুরো রায়টি বাতিলযোগ্য। তাই এক্ষেত্রে তারেক রহমানও খালাসের সুবিধা পেয়েছেন।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। আপিলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এস এম শাহজাহান, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী কায়সার কামাল ও জাকির হোসেন ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল করিম।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমাদের দেওয়া যুক্তি আইনগতভাবে যে সঠিক ছিল সেটা হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রমাণিত হলো। আমরা বলেছি তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল। জাস্টিস হারিড জাস্টিস বারিড। দ্রুত শুধু সাক্ষ্য নেওয়াই নয়, এখানে মোমবাতি জালিয়েও সাজা দেওয়ার জন্য দ্রুত বিচার কাজ চালিয়েছিল বিচারিক আদালত। গত ২৬ মে শুনানি শেষে আপিলের রায় দিতে ২৮ মে দিন ধার্য করেছিলেন উচ্চ আদালত। তার আগে গত ১৪ মে ডা. জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জরিমানা স্থগিত করে ওইদিন আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হয়। গত ১৩ মে আপিল দায়েরে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা করেন হাইকোর্ট। বিলম্ব মার্জনার পর ডা. জুবাইদা রহমান সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার বিচার শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমানকে দুই ধারায় মোট নয় বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর এবং ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

বিপি/কেজে

You may also like

Leave a Comment

banglapress24

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

১১১ শেলডন রোড # ১৮৮৪, ম্যানচেস্টার, কানেকটিকাট ০৬০৪২

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৫ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী