ফরিদপুর থেকে সংবাদদাতা : ফরিদপুরের আটরশীতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের নিয়ন্ত্রণাধীন ফরিদপুর স্পিনিং মিল এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার পর থেকে এই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সদরপুরের উপজেলা প্রশাসন এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় সেখানে এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর স্পিনিং মিলের অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড তৈরির ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বড় ভাইজান হিসেবে পরিচিত আটরশী হুজুরের বড় ছেলে মাহফুজুল হকের আম মোক্তারনামা (পাওয়ার অব এটর্নি) বলে শহিদুল ইসলাম শাহিন বাদী হয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন।
মামলায় জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়াসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার পর থেকে ফরিদপুর স্পিনিং মিল এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফরিদপুর স্পিনিং মিলে আটরশীর পীরের মোঝো ছেলে ও জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলের অনুসারীরা গত সোমবার একটি হেলিপ্যাড তৈরি করতে যায়। এ সময় সেখানে আটরশী হুজুরের স্থলাভিষিক্ত মাহফুজুল হক মোজাদ্দেদীর অনুসারীরা এতে বাধা দেন। এনিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হুজুরের দুই ছেলে মধ্যে মিয়া ভাইজানের অনুসারীরা বর্তমানে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের কর্মী গ্রুপ আর মেঝো সন্তান যিনি মেঝো ভাইজান হিসেবে পরিচিত এবং জাকের পার্টির চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করছেন তার অনুসারীরা জাকের পার্টির ব্যানারে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন। কর্মী গ্রুপ ও জাকের পার্টি এখন একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আটরশীতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন ধরে এনিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে। এরই মধ্যে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মোস্তফা আমীর ফয়সলের আটরশীতে আসার কর্মসূচি জানানো হয়। আর মেঝো ভাইজানের এই সফরকে স্বাগত জানিয়ে কর্মী গ্রুপের পক্ষ থেকে অভিনন্দন সূচক ব্যানার টাঙানো হয়। তবে তিনি যেন তার দলবল তথা বহর নিয়ে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে প্রবেশ না করেন সেজন্য তাকে অনুরোধ জানানো হয়।
ফরিদপুর স্পিনিং মিল গেটে গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মোস্তফা আমীর ফয়সলের স্ত্রী শাহিনা ফয়সল প্রায় ২০টি মাইক্রোবাসযোগে ফরিদপুর স্পিনিং মিলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন। এ বিষয়ে জাকের পার্টির যুব ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, সিপিএইচডি নামে একটি আয়ুর্বেদিক কোম্পানির পরিদর্শন করতে মেঝো ভাইজানের আসার কথা। তবে তিনি এখনো আসেননি। তার পরিবর্তে মেঝো ভাবিজান আসবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মিয়া ভাইজান হিসেবে পরিচিত মাহফুজুল হক ঢাকা থেকে সড়ক পথে ঢাকা থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এসে পৌঁছান। এ সময় তার সঙ্গে প্রায় ৩০টি গাড়ির বহর ছিল। তার অনুগামী কর্মী গ্রুপের প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ভক্ত তার স্বপক্ষে বিশ্বজাকের মঞ্জিলে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিশ্বজাকের মঞ্জিলের পশ্চিম দিকের মূল সড়কের আশেপাশে কর্মী গ্রুপের লোকেরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে সেখানে প্রচুুর সংখ্যক পুলিশও মোতায়ন রয়েছে। জাকের মঞ্জিলে প্রবেশের কালে সন্দেহজনক কোনো গাড়ি কিংবা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কর্মী গ্রুপের ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, মেঝো ভাইজান দরবার শরীফে আসবেন তাকে কর্মী গ্রুপ অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু তার এই আগমনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে মিল গেটে অবস্থান করছে। তারা এর আগে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল এলাকায় লাঠি মিছিলও করেছে। আমরা আমাদের এই আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানটিতে এমন কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার হোক তা চাই না।
এ ব্যাপারে সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, এটি আসলে আম জনতার জন্য প্রয়োগকৃত কোনো ১৪৪ ধারা নয়। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে সেখানে এই সিদ্ধান্ত জারি করা হয়েছে। উভয় পক্ষকে বলেছি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী হালদার ১৪৪ ধারা জারির সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেখানে উভয় পক্ষকেই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিপি/আর এল