বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় সংস্কার কাজ বাকি থাকায় ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের কাজের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে গার্মেন্ট মালিকদের এ সংগঠন ও অ্যাকার্ডের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। অ্যাকর্ড স্টিয়ারিং কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ জনই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরসিসি সন্তোষজনক সক্ষমতা অর্জন করেছে কিনা- তার ওপরেই অ্যাকর্ডের চলে যাওয়া নির্ভর করছে।
বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন থাকতে হবে এমন প্রশ্নে অ্যাকর্ড স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এডওয়ার্ড ডেভিড সাউথহল বলেন, কারখানা সংস্কার কাজ তদারকি করতে বাংলাদেশ আরসিসি গঠন করেছে। এই সেল কারখানার মান উন্নয়নে যথাযথ কাজ করতে পারছে কিনা তা যাচাই করবে অ্যাকর্ড।
“এই যাচাইয়ের মেয়াদ হতে পারে ৬ মাস। যদি অ্যাকর্ড দেখতে পায় য়ে আরসিসি অ্যাকর্ডের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে তখন তাদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।”
এজন্য ট্রানজিশনাল মনিটরিং কমিটি গঠন করার কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে ট্রানজিশনাল মনিটরিং কমিটি বা ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ড নামে কাজ চলবে। সেখানে সরকার, ব্রান্ড, শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রতিনিধিরা থাকবেন।
“আরসিসির পরিদর্শন দক্ষতা, ঝুঁকি সংস্কার কাজ, নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ, সংস্কার কাজ ও পরিচালনার স্বচ্ছতা, শ্রমিক নিরাপত্তার পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো ঠিকভাবে নিচ্ছে কিনা সেগুলো দেখবে ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ড।”
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।
তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড হিসেবে পরিচিতি পায়। তেমনি আমেরিকার ক্রেতাদের জোটের নাম হয়‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’, যা অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত পায়।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ক্রেতাদের জোট দুটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা মান উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। তারা এ শিল্পের পরম বন্ধু। অ্যাকর্ডের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ”
ক্রেতাদের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমরা জানতাম না কীভাবে অগ্নিনিরাপত্তার দরজা, স্প্রিংকলার, ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হয়, এসব অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স থেকে শিখেছি। যদিও এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। অনেক উদ্যোক্তার ওই অর্থ না থাকায় কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
“তবে অর্থ ব্যয় হলেও এখন সবুজ কারখানা নির্মাণে লিড সনদপ্রাপ্ত ১০টি কারখানার ৭টির অবস্থানই বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবুজ কারখানা সনদ পাওয়া মোট ৬৭টি কারখানার মধ্যে ১৬টি প্লাটিনাম কারখানা। আরও ২৮০টি কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।”
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চলতি মাসেই অ্যাকর্ডের কাজের মেয়াদ শেষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিন্যাশন সেল বা আরসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু তাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে থাকায় তা আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য অ্যাকর্ডের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার।
অ্যাকর্ড জানায়, ১ হাজার ৬২০টি কারখানা তারা পর্যরবেক্ষণ করেছে। এর ৮৫ শতাংশ কারখানাই তাদের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে। এসব কারখানায় কাজ করছে প্রায় ২৪ লাখ শ্রমিক।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।