এম আর আলী টুটুল, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার পর দফায় দফায় আরও অতিরিক্ত যৌতুক দাবি করে প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে হয়রানী করার মাধ্যমে লাঞ্চনা-গঞ্জনা তথা নির্যাতন করার অভিযোগ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এমনকি এবার দাবিকৃত অর্থ না দেয়া হলে ডিভোর্সের হুমকি দেয়া হয়েছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট রেলওয়ে কলোনীর বাসায় গত ৪ মে সোমবার রাতে ব্যাংকার স্বামী ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। এ সময় সৈয়দপুর থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগের কপি উপস্থাপন করেন সাংবাদিকদের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মউ (ছদ্মনাম) জানান, বিগত ৩/৯/২০১৭ ইং সালে মাস্টার্স পড়াকালীন সময়েই অনেকটা তাড়াহুড়া করে মাত্র একদিনের দেখাতেই পারিবারিকভাবেই তাকে বিয়ে করে সৈয়দপুর শহরের নয়াটোলা মসজিদ সংলগ্ন মৃত. নুরুল হক (মুক্তিযোদ্ধা)’র ছেলে মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ (৩২)। আসাদের বড় মা (সৎ মা) সৈয়দপুর মহিলা কলেজের সাবেক হিসাব রক্ষক আরশেদা হক লতা নিজে পছন্দ করে ছেলের বিয়ে দেন। সেসময় আসাদ অগ্রনী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলেন। এ বিয়েতে
প্রায় ১৫ লাখ টাকা নগদ অর্থসহ ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ও আড়াই ভড়ি স্বর্নালংকার যৌতুক নেয় ছেলে পক্ষ। বিয়ের ১ বছরের মধ্যে আসাদ ব্যাংকের চাকুরী ছেড়ে বাংলাদেশ কাস্টমস এ যোগ দেয়। এসময় আবারও প্রায় ৩ লাখ টাকা নেয় সে। এর কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর পদে চাকুরী হয় তার। এবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করে আসাদ ও তার মা লতা। কিন্তু মউ এর পোস্ট অফিস কর্মচারী বাবার পক্ষে এভাবে বার বার যৌতুকের টাকা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে এবার কোন টাকা দিতে পারবেনা
বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। আর তাতেই দেখা দেয় বিপত্তি। শুরু হয় ডিভোর্স দেয়ার হুমকি প্রদর্শন।
মউ জানায়, বিয়ের পর থেকে দীর্ঘ ২ বছর ৭ মাসের দাম্পত্ত জীবনে মাত্র ১০ দিন স্বামীর বাড়িতে অবস্থানের সুযোগে হয়েছে তার। কারণ শ্বাশুড়ি লতার হুকুম ছিল পড়াশোনা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকা যাবেনা। বিয়ের পর পরই যে কয়েকদিন শ্বশুরবাড়িতে ছিলো সেসময় স্বামী আসাদ ও শ্বাশুড়ি লতা অকারণে ঝগড়া বিবাদ করে অশান্তি সৃষ্টি করে। আর এ অজুহাতেই তার বাড়িতে স্ত্রীর যাওয়া বন্ধ রাখে আসাদ। এমনকি স্বামীর
অবর্তমানে শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বাশুড়ি লতা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ নানাভাবে লাঞ্চনা-গঞ্জনা করে। তাছাড়া এরই মধ্যে মউ এর নামে নানা অপবাদ সৃষ্টি করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি করে লতা। তাই পড়াশোনা শেষ করার পরও আর যাওয়া হয়নি শ্বশুরবাড়িতে। সৎ মায়ের সৃষ্ট অপবাদে আসাদ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে মউকে। এক পর্যায়ে ডিভোর্স দেয়ার জন্য আসাদকে চাপ দেয় লতা।
এদিকে এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর পদে চাকুরী পেয়ে রংপুরে যোগদান করে আসাদ। তখন সে রংপুরে ফ্লাট নিয়ে একসাথে বসবাসের কথা জানায়। সে অনুযায়ী বিগত প্রায় ১১ মাস যাবত রংপুরেই অবস্থান করছেন মউ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকুরীর জন্য দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় একসাথে বসবাসেও বাধার সৃষ্টি করে লতা। বাধ্য হয়ে মউ সৈয়দপুরের নয়াটোলাস্থ স্বামীর বাড়িতে আসলে ওই যৌতুকের চাপ দিয়ে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে লতা। বাড়িতে অবস্থান করতে দেয়া তো দূরের কথা আসাদের সাথে সংসার করতে দেয়া হবেনা বলে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এরই মধ্যে আসাদ ৪ মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এ ঢাকায় চলে যায়।
এসময় মউ রংপুরে একাই অবস্থান করে। ট্রেনিং শেষে আসাদ সৈয়দপুরে ফিরলেও মউ এর কাছে যায়নি বা মউ কে সৈয়দপুরেও নিয়ে আসেনি। এমনকি কোন প্রকার যোগাযোগও করেনি। লকডাউনের কারণে মউ রংপুরে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। পরিশেষে গত ২৭ এপ্রিল সকাল ৮ টায় মউ রংপুর থেকে সৈয়দপুরে এসে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে স্বামীর বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে লতাসহ স্বামীর বড় বোন ললনা, তার স্বামী সাজ্জাদ বাধা প্রদান করে। তারা জানায় আসাদ ১ মাস আগেই মউ কে তালাক দিয়েছে। কিন্তু মউ তালাকে কাগজ পায় নাই বা এ তালাক সে মানেনা বলে প্রতিবাদ করলে তাকে জোড় পূর্বক বাড়ির সামনে থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় তারা এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মউ কে সহ পরিবারের লোকজনকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিতে থাকে। এতে প্রায় ৫ ঘন্টা বাড়ির সামনে অবস্থান করে মউ। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে সৈয়দপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়। সে অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করে মউ। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতি যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বাশুড়ির নির্যাতন ও অন্যায়ের বিচার দাবি করেছেন মউ।
মউ আরও বলেন, আসাদের সৎ মা মূলতঃ প্রথম থেকেই আমাদের সাথে প্রতারণা করে চলেছেন। বিয়ের পর জানতে পারি লতা আসাদের সৎ মা এবং নিঃসন্তান। দীর্ঘদিনেও সন্তান না হওয়ায় তিনিই তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা নুরল হককে অন্যত্র বিয়ে দেন পর্না নামের এক মহিলার সাথে। যিনি আসাদের আসল মা। বিয়ের সময় থেকেই লতা তার হুকুম মত পর্না কে পরিচালিত করে আসছেন। একেবারে দাসীর মত আচরণ করেন তার সাথে। এমনকি স্বামীর বসতভিটা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতার অধিকারীও একমাত্র লতা। সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন পর্না কে। এ নিয়ে প্রায়ই পর্না ও তার ছোট দুই মেয়ে কি যেন বলতে চেয়েছেন কিন্তু লতা’র রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বলতে পারেনি। তাছাড়া আসাদ ও তার বড় বোন ললনাও সৎ মায়ের কথা মত চলে। কারণ পিতার সম্পত্তি ও ভাতার অংশ পাওয়ার লোভে তারা নতজানু। এমনকি নিজের মায়ের সাথে আজীবন করে আসা অবিচারের কথাও তারা ভুলে গেছে। এজন্য পর্না গুমরে গুমরে কাঁদলেও বড় দুই সন্তান কোন ভ্রæক্ষেপ করে না। ছেলেকে হাত করে তাকে বিয়ে দেয়ার নামে অনেক নাটক করেছে লতা। মউ এর সাথে বিয়ের আগেও এক জায়গায় বিয়ে করে একইভাবে যৌতুক নিয়ে পরে তালাক দিয়েছে। যা মউ আগে জানতো না। পরে জানতে পেরে এ ব্যাপারে বার বার প্রশ্ন করেও কোন উত্তর পায়নি।
আসাদের পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদের কারো সাথেই মউকে মিশতে দেয়া হতোনা। তারাও কখনো লতা’র বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাইলেও পারেনি। সবাই যেন তার হাতে বন্দি।
এ ব্যাপারে আসাদের সাথে তার মুঠোফোন নম্বর ০১৮৮৭১৫৭৯৪৬ এ যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একমাস আগেই মউ কে তালাক দিয়েছেন তিনি। একথা বলেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর তার সাথে ওই নম্বরসহ ০১৩০৩৫৫৯৯৪৬ নম্বরে শতাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার আর কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আসাদের সৎ মা লতার মুঠোফোন ০১৭৩৬৩৬০৪৭৭ এ যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়েটার চরিত্র ভালো না। তাই তাকে আমার ছেলে তালাক দিয়েছে। তিনিও আসাদের মত এ কথা বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আর কল রিসিভ করেননি। পরে আসাদের ভগ্নিপতি শহরের কয়ানিজপাড়া এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সাজ্জাদ সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান, থানায় আসেন আপনাদের সাথে কথা আছে। সে অনুযায়ী থানায় গেলে আসাদ ও সাজ্জাদ স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাকে সাথে নিয়ে এসে সাংবাদিকদের হুমকি দেন যে, তার ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই এ ব্যাপারে যেন কোন প্রকার সংবাদ প্রকাশ করা না হয়। এতে আসাদকে থানার অফিসার ইনচার্জ এর কাছে নিয়ে যেতে চাইলে সে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং এক পর্যায়ে পালিয়ে যায়।
বিপি/আর এল