হার্টফোর্ড প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে বহিস্কারাদেশপ্রাপ্ত সালমা রেজা সিকান্দারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত শনিবার রাতে স্থানীয় কমিউনিটির নেতারা সালামার নিউ হ্যাভেনের বাসায় গিয়ে তাকে সান্তনা ও সাহস দেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ দিয়েছেন ইউ এস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। এ খবর কানেকটিকাটসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এ মর্মে আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডের ডাউন টাউন ফেডারেল ভবনের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছেন। উক্ত সমাবেশে সকল প্রবাসীদের উপস্থিত থেকে সোচ্চার প্রতিবাদ জানাতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন সালমা ও তার পরিবার।
বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক) এর সাবেক সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল জানান, নিউ হ্যাভেনের বাসিন্দা সালমার বহিস্কারাদেশের খবর জানার পর থেকেই আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।কানেকটিকাটের প্রবাসীদের নিয়ে আগামী মঙ্গলবার (৭ আগাষ্ট) হার্টফোর্ডের ডাউন টাউন ফেডারেল ভবনের সামনে উপস্থিত থেকে আমরা সালমার বহিস্কারাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবো। সমাবেশে সকল প্রবাসীদের উপস্থিত থাকার জন্য তিনি আহবান জানান।
ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি মো: মাসুদুর রহমান (অপু) বলেন, কয়েকদিন আগে আমি রাতে আমেরিকান টিভি চ্যানেলে সালমার এ খবরটি দেখেই তার ফোন নম্বর সংগ্রহ করি এবং রাত ১টার দিকে তাদেরকে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করি। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি শোনার পর পরদিন থেকেই স্থানীয় কংগ্রেসম্যান, সিনেটরসহ মূলধারার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলি।তাঁরা সকলেই এ পরিবারটিকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশেষ করে তাদের কলেজ গমনেচ্ছুক ছেলে সামিরের ভবিষ্যত নিয়েও অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ নিয়ে ইউ এস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন বলেও জানান তিনি।
ম্যানচেষ্টারের কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট ও বাক-এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া বলেন, লন্ডভন্ড সালমার পরিবারকে সাহায্য করতে আমাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা চালাচ্ছি। যেভাবেই হোক আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় হার্টফোর্ডের ফেডারেল ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশটি সফল করার চেষ্টা করছি। এ সমাবেশে সকল প্রবাসীদেরকে উপস্থিত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সালমা।ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর আর দেশে ফিরে যাননি।যুক্তরাষ্ট্রে ছেলে জন্ম নেবার পর তিনি তার ছেলের দেখাশোনা করার জন্য এদেশের থাকার জন্য একটি কষ্টের আবেদন করেন। সালমার ১৭ বছর বয়সী ছেলে সামির মাহমুদ স্থানীয় কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তার ক্লাশ শুরু হবার কথা রয়েছে। কিন্তু তার ক্লাশ শুরুর তিনদিন আগেই (২৩ আগষ্ট) তার মা সালমাকে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ দিয়েছে ইউ এস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
সামির মাহমুদ বলেন, আমার মা তো কোন অপরাধ করেনি।তিনি কোন অপরাধীও নন, তাহলে কেন আমার মাকে এদেশ ছেড়ে যেতে হবে। মাকে ছাড়া আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো জানি না। মা-বাবাই আমার সবকিছু।
সালমা রেজা সিকান্দার বলেন ‘আমার স্বপ্ন আমার ছেলে।সে লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হবে এজন্যই শত কষ্ট করেও এদেশে পড়ে আছি।সালমার স্বামী আনোয়ার মাহমুদ স্থানীয় একটি একজন রেস্তোরাঁর ম্যানেজার বলে জানা গেছে। তাদের দেশের বাড়ি বাংলাদেশের বি-বাড়িয়া জেলার সদর উপজেলায়।
সালমা রেজা সিকান্দারের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কারাদেশের প্রতিবাদ জানিয়ে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।আপনার একটি স্বাক্ষর বাচাঁতে পারে একটি পরিবারকে।