নিউইয়র্ক প্রতিনিধি: বিপদ-আপদে বাবা ছেলেকে রক্ষা করবেন- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সব কিছুতেই ব্যতিক্রম। বাবাসুলভ আচরণেও তিনি অযোগ্য। কে বাবা, কে ছেলে- দেখার সময় নেই। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ নীতিতেই আস্থা এ মার্কিন প্রেসিডেন্টের। নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ অভিযোগ থেকে বাঁচতে ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। রুশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র বৈঠক করেছিল বলে গত সপ্তাহে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
এতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার আঁতাত নিয়ে তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। আগেই বিশেষ পরামর্শক রবার্ট মুলার ট্রাম্প পরিবারকে জড়াতে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের দিকেই নজর ছিল মুলারের। এবার ছেলের দিকে আঙুল তুলে পুরো পরিবারকে রুশ সংযোগ তদন্তে ফাঁসানোর সুযোগই করে দিলেন ট্রাম্প।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে তথ্য পেতে ট্রাম্প টাওয়ারে রুশদের সঙ্গে বড় ছেলের বৈঠকের কথা রোববার স্বীকার করেন ট্রাম্প। পুতিন-ঘনিষ্ঠ রুশ আইনজীবী নাতালিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়রের বৈঠক নিয়ে টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ‘ওই বৈঠক সম্পূর্ণ বৈধ ছিল। রাজনীতিতে হরহামেশাই এমন হয়ে থাকে।’ ট্রাম্পকে জেতাতে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর থেকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শুরু থেকেই ট্রাম্প এবং রাশিয়া উভয়ই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বর্তমানে বিশেষ পরামর্শক রবার্ট মুলারের নেতৃত্বাধীন দল নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করছে।
হিলারির নির্বাচনী প্রচার ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন তথ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ট্রাম্প জুনিয়র এক রুশ আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হয়েছিলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল নিউইয়র্ক টাইমস। নাতালিয়ার সঙ্গে ক্রেমলিনের যোগাযোগ আছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। গত বছর জুলাইয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এরপর ট্রাম্পপুত্র জোর দিয়ে বলেছিলেন, রুশ আইনজীবী তার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য দেননি বা এ সংক্রান্ত কোনো কথাও তাদের মধ্যে হয়নি। তারা ‘রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিশু দত্তক নিয়ে’ আলোচনা করেছেন।
নাতালিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্পের জামাতা ও তার সাবেক প্রচার ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্টও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রুশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছিলেন ট্রাম্প জুনিয়র। পরে ওই বৈঠক নিয়ে তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি। গত রোববার ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএনসহ কয়েকটি গণমাধ্যম ২০১৬ সালে ৯ জুনের ওই বৈঠক নিয়ে ছেলের আইনি ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা নিয়ে ট্রাম্প উদ্বিগ্ন বলে খবর প্রকাশ করে।
পরে এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার ছেলের বৈঠক নিয়ে আমি নাকি উদ্বিগ্ন; এটি ভুয়া খবর, সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমি ওই বৈঠক সম্পর্কে জানতাম না!’ যদিও ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন দাবি করেছিলেন, ট্রাম্প আগে থেকেই ওই বৈঠকের কথা জানতেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীর বিষয়ে তথ্য পেতে রুশ আইনজীবীর সঙ্গে ছেলের বৈঠক হওয়ার বিষয়টি এই প্রথম স্বীকার করেন তিনি, যা তাদের আগের সব বক্তব্যের বিপরীত। ট্রাম্পের এই স্বীকারোক্তিই এখন মুলারকে ট্রাম্প পরিবার অবধি পৌঁছে দেবে।
বাংলাপ্রেস/ইউএস