Home জীবনযাপন লালমনিরহাটে নিজেদের অর্থায়নে তৈরি হলো ৯টি ‘সাঁকো’

লালমনিরহাটে নিজেদের অর্থায়নে তৈরি হলো ৯টি ‘সাঁকো’

by Dhaka Office
A+A-
Reset

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তাপাড়ের বন্যার্ত মানুষেরা নিজেদের অর্থায়নে নিজেরাই বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তায় ৯টি সাঁকো তৈরি করে কোন রকম যোগাযোগ সচল করেছেন।

জানা গেছে, গত জুন থেকে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত থেমে থেমে কয়েক দফায় বন্যার কবলে পড়ে তিস্তার বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার মানুষ। বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সকল রাস্তা পানির তীব্র স্র্রোতে ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জেলার ৫টি উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তি ও চরাঞ্চলের প্রায় সকল রাস্তাঘাট পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। এসব এলাকার রাস্তাগুলো বেশ কিছু স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্ঠি হয়েছে। ফলে মুল ভুখন্ডের সাথে যোগাযোগ রাখতে এ অঞ্চলের মানুষদের পানিতে ভিজে পারাপার করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের আলাদা শুকনো কাপড় ব্যাগে নিয়ে মুল ভুখন্ডে এসে ভিজা কাপড় পরিবর্তন করে গন্তব্যে যেতে হয়।

ভেঙ্গে যাওয়া এসব রাস্তা পাড়াপাড় হতে অনেকেই পা পিছলে পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব বরন করছেন। রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় কোন আত্নীয় স্বজনও এসব গ্রামে যাচ্ছে না।

যোগাযোগ ব্যাবস্থা নষ্ট হওয়ায় শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ হলেও নষ্ট হওয়া এসব গ্রামীন রাস্তা সংস্কার বা বাঁশের সাঁকো তৈরীর কোন উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। ফলে চরম কষ্টে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিস্তা পাড়ে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।

গেল বন্যার ছোবলে এমনি ভাবে কোয়াটার কিলোমিটারে ৯টি স্থানে ভেঙ্গে যায় কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মিলন বাজার থেকে রুদ্বেশ্বর, বাগেরহাট ও ইচলি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি। স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের বারংবার অনুরোধ করেও সুফল পান নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে নিজেদের দুর্ভোগ কমাতে গ্রামবাসী নিজেরাই বাঁশ ও টাকা চাঁদা দিয়ে নিজেরাই ৯টি সাঁকো তৈরী করেছেন। যা কেবল মাত্র পায়ে হেঁটে বা বাই সাইকেল নিয়ে যাতায়ত করার উপযোগী । নিজের সাঁকোতে পায়ে হেঁটে হলেও এখন আর কাপড় ভিজে না নদী তীরবর্তি ও তিনটি গ্রামের মানুষের। তবে রিক্সা বা ভ্যান যাওয়া সুযোগ নেই বাগেরহাট, ইচলি, রুদ্বেশ্বর গ্রামে। জরুরী প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরিবহন সমস্যার কারনে তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্যের ন্যায্য মুল্য থেকেও বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারে উচ্চ মহলের দৃষ্টিকার্ষন করেন স্থানীয়রা।

ইচলি গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, বন্যার পানিতে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তা পাড়াপাড় হতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে তার স্বামীর পা ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। নদীভাঙনে এবং বন্যায় আবাদি জমি হারিয়ে ৯ সদস্যে পরিবারে খাবার নিয়ে শ্বঙ্কার মাঝে উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি বিছানায় পড়ে থাকায় চরম হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।

রুদ্বেশ্বর গ্রামের অহেদ আলী ও শাহ আলম জানান, বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়ত ঠিক করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েক দফায় বলা হয়েছে। কিন্তু এ গ্রামগুলো লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার সীমান্তে হওয়ায় কেউ খবর রাখে না। গ্রামের এসব ছিন্নমুল ও হতদরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে নিজেরা সামর্থানুযায়ী বাঁশ ও টাকা দিয়ে ৯টি সাঁকো তৈরী করেছি। পায়ে হেঁটে যেতে পারলেও রিক্সা ভ্যান যাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ অসুস্থ হলেও দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করার দাবী জানান তারা।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বন্যার কবলে ক্ষতিগ্রস্থ এসব গ্রামীন অবকাঠামো মেরামত করতে প্রকল্পের তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ এলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’

বিপি/আর এল

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী