সুলতানা মাসুমা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ রায়পুর আবদুর রহমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অনৈতিক ও কু-প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক ও বর্তমান একাধিক ছাত্রীকে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে এবং সরাসরি শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। সম্প্রতি একজন সাবেক ছাত্রীকে তার দেওয়া মেসেজের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। এতে করে গত কয়কদিন থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে অজানা কারণে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষক আব্দুর রহিমের অপসারণ এবং বিচারের দাবিতে ৩ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় রায়পুর উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেছেন ঐ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকবৃন্দ। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি দেন তারা।
বৃহস্পতিবারের মানববন্ধনে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম ছাত্রীদের তার কাছে একান্তে পড়তে বলেন। কোনো কোনো ছাত্রীদের একা দেখলে তার রূপের প্রশংসা করে কুরুচিপূর্ণ অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে গেলেও তাদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে কল দিতেন প্রধান শিক্ষক। এতে তারা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সম্প্রতি সাবেক এক ছাত্রীকে ম্যাসেঞ্জারে অনৈতিক প্রস্তাব দেন শিক্ষক আবদুর রহিম। সেখানে বিভিন্ন উত্তেজক এবং কুরুচিপূর্ণ বার্তা পাঠান তিনি। সে বার্তার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবহিত হলেও অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যে শিক্ষকের চোখে আমরা ছাত্রীরা নিরাপদ নয়, তার কাছে কিভাবে পড়বো? তার কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা নেবে। আমরা অচিরেই এ শিক্ষকের অপসারণ চাচ্ছি এবং তার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
দক্ষিণ রায়পুর আব্দুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী অভিযোগ করে জানান, শিক্ষক আবদুর রহিমের কারণে তার শিক্ষাজীবন ধ্বংশ হয়ে গেছে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমি ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখন শিক্ষক আব্দুর রহিমের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। উনি আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতো। নোংরা কথা বলতো, যেগুলো বলার মতো নয়। পরে বিষয়টি আমি আমার পরিবারকে জানালে আমাকে আর স্কুলে পাঠায়নি। তখন আমি আর টেস্ট (নির্বাচনী) পরীক্ষা দিতে পারিনি। যার কারণে আমার শিক্ষা জীবনটা নষ্টা হয়ে গেছে। উনি আমার বাসায় ফোন দিয়ে আমাকে চাইতেন। শুধু আমার সঙ্গে নয়, ২০১৪ সালে উনি স্কুলে যোগদানের পর থেকে সব মেয়েদের সঙ্গেই খারাপ আচরণ করতেন।
রায়পুর উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক আমাদের গুরুজন। ওনার কাছ থেকে এগুলো আমরা আশা করি না। উনি আমাদের মোবাইলে বিভিন্ন ম্যাসেজ দিতেন। রিপ্লাই না দিলে ক্লাসে এসে আমাদের জিজ্ঞেস করতেন। প্রশ্নপ্রত্র দেওয়ার কথা বলে তিনি ছাত্রীদের একা তার কাছে যেতে বলেন। বাজে কুপ্রস্তাব দেন।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর একজন নারী অভিভাবক মানববন্ধনে বলেন, আমাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাই লেখাপড়া শেখানোর জন্য। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা উনার সন্তান সমতুল্য। উনি কিভাবে পারেন এসব কথা বলতে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের মোবাইল ফোনে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির সভাপতি রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠানের নিকট এ ঘটনায় আইনি কি ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভুক্তভোগী কেহ লিখিত অভিযোগ দিলে শিক্ষকের বিচার করা হবে? এ (ইভটিজিং) ঘটনার বিচার করার ক্ষমতা আপনার আছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সাইফুল হক বলেন, মানববন্ধন ও অভিযোগের বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, আমি রায়পুরে নেই। তবে এ বিষয়ে স্বারকলিপি আমার অফিসে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।
বিপি/কেজে