সুলতানা মাসুমা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠেছে নতুন চর। চারপাশে মুগ্ধকর পরিবেশ। উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের নবীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিকে সাবেক চর কাঁকড়া মৌজায় জেগে ওঠেছে এ চর। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ‘ক্র্যাব আইল্যান্ড’। এর মাটি চাষের উপযোগী বলে তারা মনে করছেন। ইতোমধ্যে জমি চাষের উদ্দেশ্যে তারা চরে যাতায়াতও শুরু করেছেন। সেখানে অতীতে নিজেদের কিংবা পূর্ব পুরুষদের বসতি ছিল। এ চরকে ঘিরে অতীতে সবহারা মানুষ চাষাবাদ করে সবুজ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন।
এদিকে বুধবার দুই শতাধিক অধিবাসী দলবদ্ধভাবে জেগে ওঠা নতুন চরে যান। কমলনগর উপজেলা পরিষদ থেকে সড়ক পথে ৯ কিলোমিটার দুরের এ চরটি ঘুরে সাবেক চর কাঁকড়া মৌজায় জেগে ওঠা চরটির নতুন নামকরণ ‘ক্র্যাব আইল্যান্ড’ করা হয়। এসময় একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। পরে জোহরের আজান দিয়ে খোলা আকাশের নিচে তারা পেপার-প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। শেষে চরের বুকে কয়েকটি ঝাউগাছের চারা রোপণ করা হয়। চরটির আয়তন কত তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে বেসরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, চরটিতে এক হাজার ২০০ একরের বেশি জমি রয়েছে।
অন্যদিকে একই দিন নতুন চর পরিদর্শনে যান কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফেরদৌস আরা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এসময় তারা লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
জেগে ওঠা চরের সাবেক অন্তত ১২ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর রাক্ষুসে ভয়াবহ ভাঙনে তারা ঘর-বাড়িসহ সব সম্পদ হারিয়েছেন। এখন ১০-১২ বছরের ব্যবধানে সেখানে আবার ভূমি জেগে উঠেছে। এরমাটি ফসল ফলানোর জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে। অব্যাহত ভাঙনের কারণে কমলনগরে চাষের তেমন জমি নেই। তারা (সাবেক বাসিন্দারা) এ বছরের বৈশাখ মাসে জমিতে ধান চাষ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলনগরে প্রায় তিনযুগ ধরে নদী ভাঙন হচ্ছে। উপজেলার চর কাঁকড়া, চর কালকিনি, উত্তর চর কালকিনি, দক্ষিণ চর কালকিনি, দক্ষিণ চর লরেঞ্চ মৌজা পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার ১০-১২ কিলোমিটার এলাকা নদীর পেটে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক চর কাঁকড়া মৌজা, যার নতুন নাম ক্র্যাব আইল্যান্ড। আগামী বৈশাখ মাস থেকে সেখানে চাষাবাদের জন্য নদীভাঙন কবলিত বাসিন্দারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাবেক সেনা সদস্য আবদুর রহমান দিদার বলেন, নতুন চরে চাষাবাদ শুরু করার জন্য আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। মিলেমিশে এ চরের জমিতে চাষাবাদ করলে ব্যাপক ফসল হবে। চাষাবাদের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া ভূমি আবার ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চাইবেন।
জেগে ওঠা চরে অতীতে বসতবাড়ি-জমি হারানো চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ হিরণ বলেন, নদীর বুকে জেগে থাকা এ চরে চাষাবাদ শুরু হলে জেলেদের নিরাপত্তা বাড়বে, অপরাধ কমবে। বর্তমানে খালি পড়ে থাকা, জনমানবহীন এ চর বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত হয়। চাষাবাদ শুরু হলে মানুষের যাতায়াত বাড়বে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, চরের জমি সরকারের মালিকানা। আপাতত এতে কারো ব্যক্তি মালিকানা নেই। শিগগিরই জমি পরিমাপের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলা হবে। এরপর জমিগুলো জেলা প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত হবে। পরে এ মৌজার পূর্ব মালিকানাধীন লোকজন কাগজপত্র দেখাতে পারলে আইন অনুযায়ী তাদের জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। এরআগে খাদ্যসংকট দূর করার লক্ষ্য ভাতৃপ্রতীমভাবে চরে সবাই চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো যাবে না।
কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী বলেন, খবর পেয়ে আমরা নতুন চর পরিদর্শন করেছি। অতীতে সেখানে যাদের ঘর-বাড়ি ছিল, তারা নতুনভাবে চাষাবাদ করতে চায়। বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিপি>আর এল