রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানা আওয়ামী-লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মধ্য বুধপাড়া এলাকা বাসী। তারই প্রতিবাদে আলাউদ্দিনের সাংগঠনিক শাস্তি ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উম্মে-কুলসুম মনি (২৯) ও তার স্বামী মোঃ মনিরুল ইসলাম (৩১)।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন পি.এন স্কুলের পাশের একটি অফিসে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, উম্মে-কুলসুম মনি ও স্বামী মোঃ মনিরুল ইসলাম।
তারা বলেন, গত শুক্রবার চাঁদ রাত (২১ এপ্রিল) দিনগত রাত দেড়টায় মহানগরীর মতিহার থানাধীন মধ্য-বুধপাড়া এলাকায় আমার নিজ বাড়ির সিড়িঘরে বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ সময় তড়িঘড়ি করে আমি ও আমার স্বামী মোঃ মনিরুল ইসলাম (৩১) ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখি সিড়ি ঘরে রাখা মোটরসাইকেল আগুন জ্বলছে। দেরি না করে দ্রুত পানি দিয়ে মোটরসাইকেলের আগুন নিয়ন্ত্রণে করি।
এরপর নিজ ঘরে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ চেক করে দেখি আগুন লাগানো যুবক একই এলাকার হাবুর ছেলে নিরব (১৩)। এ সময় আমারা স্বামী-স্ত্রী বাইরে বেরিয়ে বলি আমরা কি এলাকায় বসবাস করতে পারবো না ? এই কথা বলার কিছুক্ষনের মধ্যেই স্থানীয় প্রভাবশালী আ’লীগ নেতার দুই ভাই মাসুদ ও বাক্কার দু’জনে মিলে আমার স্বামী মনিরুল ইসলাম ও আমাকে ব্যপক মারধর করে। এ সময় তারা আমাকে মারতে মারতে আমার বুকের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং গলায় আঘাত করে ছিলা ফোলা জখম করে।
কোন উপায় না দেখে জাতীয় সেবা কেন্দ্র ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি অবগত করি। ৯৯৯ থেকে বলা হয়, মতিহার থানার এএসআই জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনাদের সমস্যা দেখবেন। পরে রাত পৌনে ২টায় এএসআই জুয়েলকে ফোন দিলে তিনি বলেন, অপেক্ষা করুন, দ্রুত আসছি। ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছাতেই এএসআই জুয়েলের পৌনে ১ঘন্টা লেগে যায়। অর্থাৎ তখন রাত আড়াইটা।
ঘটনাস্থলেই পৌঁছেই অগ্নিমূর্তি ধারন করে এএসআই। তিনি বলেন, সামান্য বিষয়ের জন্য এত রাতে ফোন দিয়েছিস কেন? ৯৯৯-কি তোর বাবার কেনা সম্পত্তী? এএসআইয়ের কথায় পূণরায় মারধর করে হামলাকারীরা। ওই সময় আমার (হার্টের রোগী) মামা লালন বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও বে-ধড়ক মারধর করে হামলাকারীরা। হামলাকারীদের বড় ভাই মোঃ রাব্বেল বলেন, আমি (৩০ নং) ওয়ার্ডের (উত্তর) আ’লীগ সভাপতি। আমাদের সাথে লেগে এলাকায় বসবাস করতে পারবি না।
আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ডেকেছিস তোর এত বড় সাহস। পেট্রোল ঢেলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেবো। এর কিছুক্ষন পরে মতিহার থানা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন পুলিশ সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি পুলিশকে বলেন, মনিরুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যান। গৃহবধূ মনি বলেন, স্যার আমাকে ও আমার স্বামীকে তারা ব্যপক মারপিট করেছে। জামা-কাপড় ছিড়েছে। আমার বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখুন, সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। গৃহবধূর অনুরোধ কোন ভাবেই কর্ণপাত করেননি এএসআই জুয়েল। তবে নেতা রাব্বেল ও আলাউদ্দিন এএসআই জুয়েলকে বলেন, আমাদের এলাকার ঘটনা। আমরাই ঠিক করে নিবো। আপনারা এখান থেকে যান। এমন কথায় সাথে সাথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এএসআই জুয়েল।
তারা আরও বলেন, ঈদের মধ্যে থানায় গিয়ে ওসিকে না পেয়ে মামলা বা অভিযোগ কোনটাই করতে পারেনি। তবে (২৩ এপ্রিল) রাতে মতিহার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমার বাড়ির ঘটে যাওয়া ঘটনা ও নির্যাতণের সমস্ত ভিডিও আমার সংরক্ষণে রয়েছে।
তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়য় এএইএম খায়রুজ্জামান লিটন কাছে মতিহার থানা সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দেন বহিস্কার দাবি করেন। কারন তার মদদেই বুধপাড়ার এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে তার ও তার ভাইদের নির্যাতণের শিকার হয়ে আসছে। আলাউদ্দিনের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না প্রকাশ্যে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখায়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হুমকি দেয়।
এছাড়া মারধর তার নিত্য দিনের ঘটনা। সেই সাথে আলাউদ্দিন, তার দুই ভাই ও ভাতিজার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জন্য আরএমপি পুলিশ কমিশনার-এর কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা।
এ ব্যপারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে মতিহার থানা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, মারধরের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ভিডিও ফুটেজ আছে অবগত করা হলে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজে কি আছে আমাকেও দেখতে হবে বলে জানান তিনি। তার কিছুক্ষণ পরেই আলাউদ্দিনের ছোট ভাই অভিযুক্ত মাসুদ ইদের আগেরদিন চানরাতে ছোট ছোট বাচ্চারা তো পটকা ফোটাবেই ! তাছাড়া কুলসুম সেদিন খুব বাজে ভাষায় গালিগালাজ করছিল। আমরা তাকে থামতে বললেও সে অনরগল ভাবে নোংড়া ভাষায় গালিগালাজ করছিল। তাকে ও তার স্বামীকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারা মিথ্যা কথা বলছে।
মুঠো ফোনে জানতে চাইলে (৩০ নং ওয়ার্ড উত্তর) আ’লীগের সভাপতি মোঃ রাব্বেলের, ফেন ব্যস্ত পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৯৯৯-তোর বাবার সম্পত্তী ভুক্তভোগীদের এমন কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে, মতিহার থানার এএসআই জুয়েল বলেন, এটা সঠিক নয়। আমি ভুক্তভোগীদের বাঁচিয়েছি। নেতা-আর নেতার লোকজন যে ভাবে আক্রমন করছিলো আমি না না মার্ডার ও হতে পারতো।
জানতে চাইলে মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, রবিবার রাতে ভুক্তভোগী উম্মে-কুলসুম মনি বাদী হয়ে থানায় একটি দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বিপি>আর এল