নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও ক্ষমতায় আসেননি। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পুলিশ বিভাগ ও অভিবাসন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা বিভিন্ন অনিয়ম এবং অপরাধে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন শহরে অভিযান চালাচ্ছে। এসব অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী। এ নিয়ে ইমিগ্রেশন রাইটস ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অবৈধ অভিবাসীদের (আনডকুমেন্টেড) জন্য নিউ ইয়র্ক সিটি আর নিরাপদ নয়। আগে যে কোনো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর অবৈধ অভিবাসীরা স্যাংচুয়ারি সিটি হিসাবে নিউ ইয়র্ক সিটিকে বেছে নিতেন। কিন্তু ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশী অবৈধ অভিবাসীর বসবাস এখন নিউ ইয়র্কে। ফলে অবৈধ অভিবাসী নিয়ে বিপাকে পড়েছে নিউইয়র্ক সিটি।
ইমিগ্রেশন রাইটস ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের সুরক্ষায় ২০১৪ সাল হওয়া নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে একটি আইন পাস হয়েছিল। ওই আইনের কারণে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ কারো ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস জিজ্ঞেস করতে পারতো না। এমনকী ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টদের কোনো তথ্য প্রদানে বাধ্য ছিল না। এই আইনটি এখনো বলবৎ আছে। তবে অপরাধে জড়িয়ে পড়লে নিউইয়র্ক পুলিশ চাইলে যে কেনো অবৈধ অভিবাসীকে ডিপোর্ট করতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টদের জানাতে পারে।
একজন উচ্চপদস্থ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক সিটির আইন এবং নীতিগুলি অবৈধ অভিবাসীদের ডিপোর্টের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। ওই কর্মকর্তা সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে দুই এনওয়াইপিডি পুলিশ অফিসারকে সহিংসভাবে মারধরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, অবৈধ অভিবাসীরা আইনের এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে খারাপভাবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মাইগ্রেন্টদের ক্রাইমের ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়ায় মেয়রের ওপর প্রচণ্ড চাপ বাড়তে থাকে। ফলে মেয়র ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেন। মেয়রের এই ঘোষণাকে নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের রিপাবলিকান সদস্য, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য নিকোল ম্যালিওটাকিসসহ অন্য রিপাবলিকানরা স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে মেক্সিকো সীমান্ত পথে ঢোকা অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের টেক্সাস থেকে বাসে করে নিউ ইয়র্ক সিটিতে পাঠিয়ে দিলে মেয়র এরিক অ্যাডামস তাদের নিয়ে জটিল আর্থিক সমস্যায় পড়লেও তিনি তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। নিউইয়র্ক সিটির সব শেল্টার পূর্ণ হয়ে গেলে তাদের থাকার জন্য সামারে স্কুল ক্যাফেটেরিয়ায় জায়গা দেন। এরপর তাদের জন্য র্যান্ডাল আইল্যান্ড পার্ক এবং ব্রুকলিনে পরিত্যক্ত এয়ার ঘাঁটিতে তাবু বানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন। তাদের দেয়া হয় হাত খরচ। ওয়ার্ক অথরাইজেশন দেয়ার জন্য ফেডারেল সরকারকে অনুরোধ জানান। মাইগ্রেশন সমস্যা মেয়র অ্যাডামসকে গভীর সমস্যায় ফেলে দেয়।
অচিরেই দেখা গেল শেল্টারগুলোতে অ্যাসাইলাম প্রার্থীরা মারামারি করছে, ছুরিকাঘাত করছে। রাস্তায় পুলিশকে নির্যাতন করতেও বাদ রাখছে না। অনেকে চুরি ও ছিনতাই ঘটনায় ধরা পড়লে দেখা যায় তারা সদ্য আসা মাইগ্রেন্ট। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এই মাইগ্রেন্টরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ কতটা চৌকষ। তারা সকলেই ধরা পড়ে।
মেয়র এরিক অ্যাডামসকে সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সব মাইগ্রেন্ট খারাপ নয়। এরা কতিপয় মাত্র। কয়েকজনের জন্য সকলকে দোষী করা ঠিক নয়। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার মেয়র ঘোষণা করলেন, নিউইয়র্ক সিটি স্যাংচুয়ারি হলেও মাইগ্রেন্টরা ক্রাইম করলে তাদের ধরে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টরা ডিপোর্ট করতে পারবে। এজন্য মাইগ্রেন্টদের অপরাধ প্রমাণের দরকার হবে না। পুলিশ সন্দেহজনক মনে করলেই তাদের গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন এজেন্টদের হাতে তুলে দেবে।
এদিকে মেয়র এরিক অ্যাডামসের ঘোষণার পর সিটি কাউন্সিল স্পিকার আদ্রিয়ান অ্যাডামস স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, স্যাংচুয়ারি আইন পরিবর্তন করতে হলে সিটি কাউন্সিলের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। আপাতত এই আইন পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
বিপি।এসএম