বাংলাপ্রেস ডেস্ক: পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে কেন্দ্র করেই মানুষের জীবন। তাদের দেখভাল করতে করতে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেন কেউ কেউ। এসবের বিনিময়ে কিছু দাবি না করলেও শেষ বয়সে ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়রা পাশে দাঁড়াবে, মারা গেলে দাফন-কাফন দেবে, এমনটা আশা করা অযৌক্তিক নয়। বরং এটাই স্বাভাবিক। তবে উন্নত বিশ্বের দেশ কানাডায় এই স্বাভাবিক বিষয়টিই যেন দিনকে দিন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। দেশটির কয়েকটি প্রদেশে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা বাড়ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ লাশ দাফনে লাগামহীন খরচ। খরচের এই চাপ সামাল দিতে না পেরে প্রিয়জনের লাশ দাবি করছেন না অনেক মানুষ।
শনিবার (১৮ মে) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বার্তা সংস্থাটির খবর অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে কানাডার কিছু প্রদেশ বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়রা দাফনের খরচের কারণে লাশ সংগ্রহ না করায় এমনটা হয়েছে।
লাশ দাফন সংক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় ১৯৯৮ সালে একটি লাশ দাফন করতে ৬ হাজার মার্কিন ডলার খরত হতো। তবে তা এখন বেড়ে প্রায় ৯ হাজার ডলার হয়েছে। এই খরচ জেরে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের লাশি দাবি করছেন না। এমনকি এই বেওয়ালিশ লাশের সংখ্যা বৃদ্ধির জেরে একটি প্রদেশ বাধ্য হয়ে নতুন লাশ স্টোরেজ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ ছাড়া লাশ দাফনে দেশজুড়ে অর্থ জোগাড়কারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ছে।
কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ হলো অন্টারিও। এই প্রদেশের প্রধান করোনার ডার্ক হুয়ার বলেছেন, ২০১৩ সালে অন্টারিও প্রদেশে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা ছিল ২৪২টি। আর মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে এসে এই সংখ্যাটা এক হাজার ১৮৩ জনে পৌঁছেছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের শনাক্ত করা হয়। কিন্তু তারা বিভিন্ন কারণে মৃতদেহ দাবি করেন না। এদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অর্থ। ২০২২ সালে এই কারণের হার ছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে তা বেড়ে ২৪ শতাংশ হয়েছে।
ডার্ক হুয়ার বলেন, এটি দুঃখজনক। কারণ একজন মানুষ মারা গেলেন। অথচ তার কেউ নেই। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কেউ। যারা কিনা তার মৃত্যুর পর মরদেহ কীভাবে দাফন করা হবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কানাডায় মরদেহ দাফনে সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার। তবে তা যথেষ্ট না। গত এপ্রিলের বাজেটে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার লাশ দাফনে আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
কানাডীয় অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের প্রেস সচিব ক্যাথরিন কাপলিনস্কাস এক ইমেল বার্তায় বলেছেন, জীবনসঙ্গী হারানো একজন বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিষয়। সারাজীবনের কঠোর পরিশ্রমের পর এটি বিশাল আর্থিক বোঝাও হতে পারে। তাই মৃত্যু পরবর্তী সুবিধা দিতে আমরা কানাডা পেনশন ব্যবস্থা শক্তিশালী করছি।
বিপি/টিআই