নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার ওভাল অফিস থেকে দেয়া এক ভাষণে ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তার প্রথম ভাষণে ৮১-বছর বয়স্ক বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষা করা যে কোন উপাধির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
আমেরিকান জনগণের জন্য এই ভাষণ ছিল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ সরাসরি বাইডেন থেকে শোনার প্রথম সুযোগ। তিনি সপ্তাহের পর সপ্তাহ বলে এসেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর জন্য তিনিই সব চেয়ে ভালো প্রার্থী।
ট্রাম্পকে তিনি দেশের গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে বর্ণনা করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার একমাত্র মেয়াদ ইতিহাস কীভাবে মূল্যায়ন করবে, সেটা ঠিক করার সুযোগ এই ভাষণ বাইডেনকেও দেয়। ‘আমাদের গণতন্ত্র রক্ষার পথে কোন কিছু, কোন কিছুই আসতে পারেনা। এবং ব্যক্তিগত অভিলাষও না,’ তিনি বলেন।
বাইডেন বলেন, ‘আমি এই দায়িত্বকে সম্মান করি, কিন্তু আমি আমার দেশকে বেশি ভালোবাসি।’ বাইডেন ২৭ জুন ট্রাম্পের সাথে টেলিভিশন বিতর্কে দুর্বল পারফরমেন্সের পর থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ডেমোক্র্যাটদের চাপ প্রতিহত করেছিলেন। তিনি এক পর্যায়ে বলেন শুধুমাত্র ‘সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর’ পারে তাকে সরিয়ে দিতে।
বাইডেন তার ভাষণে বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সামনে অগ্রসর হওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব দেয়া। আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সেটাই সব চেয়ে ভাল পথ।’
দলের করা জনমত জরিপে দেখা যায় বাইডেন রিপাবলিকান দলের ট্রাম্পের কাছে নভেম্বরে পরাজিত হতে পারেন এবং তার সাথে অন্যান্য নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাবনাও নস্যাৎ হতে পারে। জরিপের পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনার পর বাইডেন তার সিদ্ধান্ত নেন।
বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকার মহান দিক হচ্ছে, এখানে রাজা বা স্বৈরশাসকরা শাসন করে না। জনগণ করে। ইতিহাস আপনাদের হাতে। আপনাদের হাতেই আছে ক্ষমতা। আমেরিকার আদর্শ আপনার হাতেই আছে।’
বাইডেন ৫ নভেম্বরের নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেয়ার পর এটাই ছিল জনসমক্ষে তার প্রথম দীর্ঘ বক্তব্য।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের মাঝে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ১৯৬৮ সালের ৩১ মার্চ হঠাৎ করে পুনঃনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বাইডেন হচ্ছেন প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যিনি নির্বাচন থেকে নিজে প্রত্যাহার করলেন।
ট্রাম্পের সাথে দুর্বল বিতর্কের পর তার মানসিক তীক্ষ্ণতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে সরে দাঁড়ানোর পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অর্জনের প্রশংসা করেছেন।
বাইডেন বলেন, তার মেয়াদের বাকি ছয় মাস তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে মনোযোগ দেবেন। তিনি বৃহস্পতিবার গাজায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক করবেন।
‘আগামী ছয় মাস আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে মনোযোগ দেব। তার মানে হলো, আমি পরিশ্রমী পরিবারদের জন্য দ্রব্যমূল্য কমাতে থাকব এবং আমাদের অর্থনীতি বাড়াতে থাকব। আমি ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং আমাদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করে যাবো– ভোটে দেয়ার অধিকার থেকে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার,’ তিনি বলেন।
বাইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৭২ সালে, যখন তিনি ২৯ বছর বয়সে সিনেটে নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ষষ্ঠ-কনিষ্ঠ ইউএস সিনেটর। বাইডেন হোয়াইট হাউসে তার মেয়াদ শেষ করবেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি, যখন তিনি ৮২ বছর অতিক্রম করে ফেলবেন।
“গণতন্ত্র রক্ষা করা যে কোন উপাধির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমেরিকান জনগণের পক্ষে কাজ করা থেকে শক্তি পাই, আনন্দ পাই। কিন্তু আমাদের দেশকে ঠিক করার পবিত্র কাজ আমার বিষয় না। এটা আপনাদের বিষয়। আপনার পরিবার। আপনার ভবিষ্যৎ। এটা হচ্ছে ‘আমরা জনগণ’,” তিনি বলেন। বাইডেনের পুরো মেয়াদে এটা ছিল মাত্র চতুর্থ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এবং সম্ভবত তার শেষ।
রিপাবলিকানরা বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকেই সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, বাইডেন যদি পুনঃনির্বাচনের জন্য যোগ্য না হন, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্যও যোগ্য নন।
বিপি।এসএম