বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সহকর্মীর সঙ্গে ঘটা এমন নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে নেমেছেন চিকিৎসকরা। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) শনিবার (১৭ আগস্ট) দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টা শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, ভারতের চিকিৎসকদের বড় সংগঠন আইএমএ’র অন্তত চার লাখ সদস্য শনিবার শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবেন। তবে এ সময় জরুরি পরিষেবাগুলো চালু রাখা হবে। এক্সে দেয়া এক বিবৃতিতে আইএমএ বলেছে, “চিকিৎসক, বিশেষ করে নারীরা পেশার প্রকৃতির কারণে সহিংসতার শিকার হন। হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসের ভেতরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব।”
আইএমএ’র ছাড়াও সরকারী এবং বেসরকারি একাধিক মেডিকেল ইউনিয়ন এই ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। এর আগে সোমবার (১২ আগস্ট) বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৌমিতা হত্যার প্রতিবাদে “অনির্দিষ্টকালের জন্য” পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
মূলত কলকাতার মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আরজিকরে মৌমিতা দেবনাথ নামের এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা সামনে আসার পর ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ওই চিকিৎসকের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রথমে কলকাতায় আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ আন্দোলনে যোগ দেন সাধারণ মানুষও।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) কলকাতার রাস্তায় নামেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও। বিক্ষোভের একপর্যায়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরের এ ঘটনায় বিজেপির একাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে সমাজবাদী ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (কমিউনিস্ট)। শহরের হাজরা এলাকায় চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধ বিক্ষোভে নেমেছিলেন তারা।
এদিন কলকাতার পাশাপাশি মুম্বাই ও হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন শহরে মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস ও হাসপাতাগুলোতে চিকিৎসক হত্যার বিচার এবং নারীদের নিরাপত্তার নিশ্চিতের দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া নয়াদিল্লিতে সংসদ ভবনের কাছেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
গত শুক্রবার (০৯ আগস্ট) সকালে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছে চারতলার সেমিনার হলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রী মৌমিতার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা বৃহস্পতিবারও রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডিউটি করেছিলেন। পরে কর্মরত আরও দুই জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে রাতের খাওয়া শেষ করে সেমিনার হলে যান তিনি। শুক্রবার সকালে সেমিনার হলের মেঝেতে তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হলেও বিক্ষোভের মুখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বুধবার রাতে ‘রাত দখল’ কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। এদিন কলকাতাজুড়ে রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষ। এ সময় তারা রাতে নারীদের স্বাভাবিক চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মৌমিতা হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আরজিকর হাসপাতালে হামলা চালায় বেশকিছু দুর্বৃত্ত। পুলিশ ওই তাণ্ডবের পেছনে কারা ছিল তা সনাক্ত করতে পারেনি, তবে এখনও পর্যন্ত ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিপি/টিআই