Home রাজনীতি স্বৈরাচারের দোসরদের রেখে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না: তারেক রহমান

স্বৈরাচারের দোসরদের রেখে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না: তারেক রহমান

by বাংলাপ্রেস ডেস্ক
A+A-
Reset

বাংলাপ্রেস ডেস্ক: স্বৈরাচারের দোসরদের রেখে রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেআরএফ) রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এসময় জেডআরএফ-এর ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. জুবাইদা রহমানও ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম বক্তব্য এসেছে। এমন একটি কাঙ্ক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আরও দায়িত্বশীল, গণভূমিকা ও কার্যকর দেখতে চায়। কারণ, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীলমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কোনো-ই বিকল্প নেই, এবং সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের নিঃশর্ত সমর্থনের প্রতি নিঃশর্ত মূল্য দেওয়া অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।’

রাষ্ট্র ও রাজনীতি সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে অন্তবর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমি বরাবরই সংস্কারের পক্ষে। তবে, সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। কখনো কখনো এটি সময়সাপেক্ষ। তবে, যে কোনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব সৃষ্টি না হলে সেই সংস্কারের শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।’

তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিষ্ট আদর্শ লালনকারী ও মাফিয়া সরকারের দোসরদেরকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে রেখে কোনো উদোগেরই সুফল মিলবে না। মাফিয়াচক্রের কবল থেকে দেশে ও জনগণকে মুক্ত করতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গণহত্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। স্বৈরাচারের বুলেট বিদ্ধ হয়ে হাজারো মানুষ এখনো হাসপাতালের বিছানায়, রাজপথে শহিদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অথচ পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদের মধ্যে নূন্যতম অনুতাপ নেই। বরঞ্চ মাফিয়া প্রধানের রেখে যাওয়া সুবিধাভোগীরা ইতোমধ্যে ঘর-বাহিরে, সরকারে-প্রশাসনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে।’

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত শুরুতে উপড়ে ফেলতে না পারলে তাদের বিষাক্ত দংশনে ছাত্র-জনতার শত শহিদের রক্তে অর্জিত গণতন্ত্র আবারও বিপন্ন হবে।’

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণহত্যাকারী পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করে রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে একটি সরকারের জন্য আড়াই মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয় নির্ধারণে এবং অগ্রাধিকার ইস্যু ঠিক করার জন্য হয়তো আড়াই মাস কম সময়ও নয়। আমি আগেও বলেছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অ্যাজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে সেটি প্রত্যাশিত গণতন্ত্র উত্তরণের পথে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘গণহত্যা চালিয়ে মাফিয়াচক্রের প্রধান দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণ তাদের বাক্‌ ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মাফিয়াচক্রের দীর্ঘ ১৫ বছর শাসনকালে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। জনগণ এখন পলাতক স্বৈরাচারের দুঃশাসনের অভিশাপ থেকে সম্পূণ মুক্তি চায়। বঞ্চিতরা তাদের হারানো অধিকার ফিরে পেতে চায়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচারের আমলে তাদের বিভিন্ন নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে জমি-জায়গা, দোকান ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জবর দখলকারীদের কাছ থেকে এসব সম্পদ পুনরুদ্ধারে উদগ্রিব হয়ে উঠেছে। এটা করতে গিয়ে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। বেদখল হওয়া এসব সম্পদ পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

দেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনই রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য সবাইকে স্বেচ্ছাসেবীর মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। আসুন আমরা প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাই। আমি সবশেষে জুলাই-আগস্টে হতাহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আবার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’

এ সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্ত এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিক্রেতা সবাই এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেকেরই ক্রয়সীমার বাইরে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও জনগণের আয় সেভাবে বাড়েনি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই-জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও বাস্তব এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন। মানুষকে আধপেটা রেখে কোনো ভালো কথাই গেলানো সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধরে মাফিয়াচক্রের বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি হয়তো একটু কঠিন হলেও কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার হয়তো বাড়ানো যেতে পারে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির হাল ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছিলেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে মানুষের কাছে নিয়ে যান। এই যে ত্যাগের ধারাবাহিকতা সেটি নতুন প্রজন্মকে মনে রাখা উচিত। বিএনপি লগি বৈঠা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে।’

অনুষ্ঠানে ডা. জুবাইদা রহমান বলেন, ‘বিগত ২৫ বছর যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের অসংখ্য জনকল্যাণকর প্রকল্প স্বার্থকভোবে সম্পন্ন করেছে। মানুষের জন্য মানুষ এই কথাটি ফাউন্ডেশসের প্রত্যেকটি সদস্যের জন্য অত্যন্ত প্রযোজ্য। কখনো করোনা রোগীদের সেবায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছে, কখনো প্রবল বন্যায়, হতাশাগ্রস্থ বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আহত বা অসুস্থ মানবতার সেবায় তারা সদা তৎপর। আবার কখনো বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, দুস্থ পরিবারের মাঝে হাঁস, মুরগি, ছাগল বিতরণ, কৃষকের জন্য বীজ বিতরণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কখনো বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থা করতে দেখা যায়, অথবা কখনো ভবিষৎ বিজ্ঞানীর খোজে ভার্চ্যুয়াল বিজ্ঞান মেলায় শিশু-কিশোরদের উৎসাহ প্রদান করে। জনসেবামূলক কাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশন। আমি আশা করব- আগামী বছরগুলোতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আর্তমানবতার সেবায় আরও অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ’

রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান, রাষ্ট্রদূত এস এম রাশেদ আহমেদসহ নিহত ও আহত পরিবারের কয়েকজন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি ও পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সাইফুল আলম নীরব, গোলাম সারওয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, ড. মো. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আব্দুস সালাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. মো. আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক এস এম আব্দুল আওয়াল সোহাগ, ড. আব্দুল করিম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আব্দুল হাই শিকদার, আতিকুর রহমান রুমন, প্রকৌশলী মাহবুব আলম ও প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুলসহ অনেক চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও সাংবাদিক।

অনুষ্ঠানে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১০ জন নিহতের পরিবার এবং ১০ জন আহতকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। নিহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ডা. পারভেজ রেজা কাকন এবং ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম। আহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ডা. সাজিদ ইমতিয়াজ উদ্দিন।

 

বিপি/কেজে

You may also like

Leave a Comment

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বৃহত্তম বাংলা অনলাইন সংবাদপত্র

ফোন: +১-৮৬০-৯৭০-৭৫৭৫   ইমেইল: [email protected]
স্বত্ব © ২০১৫-২০২৩ বাংলা প্রেস | সম্পাদক ও প্রকাশক: ছাবেদ সাথী