ছাবেদ সাথী
হ্যাঁ! মনে হচ্ছে কেউ কেউ বলতে চাইছে নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস পুরোপুরি বিক্রি হয়ে যাননি, তবে সঠিক মূল্যে তাকে ভাড়া নেওয়া যেতে পারে! যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন লেনদেন সত্যিই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।
কলাম লেখকদের জন্য এটি সেরা সময় এবং একই সাথে সবচেয়ে কঠিন সময়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম চার সপ্তাহ সেরা সময়। কারণ লেখার মতো এত কিছু রয়েছে। তবে এটি সবচেয়ে কঠিন সময়ও, কারণ ট্রাম্প প্রতিদিন এত অবিশ্বাস্য কাজ করছেন যে ঠিক করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে কোনটি সবচেয়ে খারাপ এবং সেই কারণে কোনটি লেখার যোগ্য সেটা ভাবতে হয়।
এই সপ্তাহে লেখার মত কিছু আছে কোনো সন্দেহ নেই। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টা এলন মাস্ক যা যা করেছেন যেমন পুলিশের ওপর হামলা করা ব্যক্তিদের ক্ষমা করা, ইউক্রেনকে ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে ছেড়ে দেওয়া, কেনেডি সেন্টারের দখল নেওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার অনাহারী শিশুদের খাবার কেড়ে নেওয়া, আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষার দায়িত্বে থাকা জ্বালানি বিভাগের কর্মীদের বরখাস্ত করা এবং পরে তাদের পুনরায় নিয়োগের চেষ্টা করা, এমনকি প্লাস্টিকের স্ট্র ফিরিয়ে আনা—এসবের কোনোটাই নিউ ইয়র্কের দক্ষিণ জেলা থেকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলাটি ফেলে দেওয়ার চেয়ে বেশি ন্যাক্কারজনক নয়।
গত সেপ্টেম্বরে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ঘুষ, ওয়্যার ফ্রড এবং বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে অবৈধ প্রচার তহবিল সংগ্রহের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল।যার জন্য দোষী প্রমাণিত হলে তিনি ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখে পড়তে পারেন।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাডামস ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু করেন। নভেম্বর মাসে তিনি ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন। ডিসেম্বরে তিনি ট্রাম্পের নতুন ‘বর্ডার জার’ টম হোমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানুয়ারিতে তিনি মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি আবার ওয়াশিংটনে যান এবং জাতীয় প্রার্থনা প্রাতঃরাশে ট্রাম্পের পাশে বসেন।
অ্যাডামসের এই প্রচেষ্টা সফল হয়। চার দিন পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমিল বোভ নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটরদের মামলাটি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন, যা সবাইকে হতবাক করে।
এটি সম্ভবত ২০১৯ সালে ট্রাম্পের সেই বের খ্যাত ফোন কলের পর সবচেয়ে খারাপ ‘কুইড প্রো কুই’ (দেওয়া-নেওয়ার চুক্তি), যেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার শর্তে মার্কিন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যার জন্য তাকে অভিশংসন করা হয়েছিল।
অবশ্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমিল বোভ ‘কুইড প্রো কুই’ থাকার কথা অস্বীকার করেন। তবে এতে নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটর ড্যানিয়েল সাসুনকে বোকা বানানো যায়নি। তিনি এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করে পদত্যাগ করেন।
নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে লেখা তার কড়া চিঠিতে সব তুলে ধরেন সাসুন। যিনি একসময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অ্যান্টোনিন স্কালিয়ার ক্লার্ক ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘অ্যাডামসের এই তদবিরকে পুরস্কৃত করা উচিত নয়; বরং এটিকে বলা উচিত যা এটি সত্যিই: অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের সহায়তা দেওয়ার বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে মামলাটি খারিজ করার একটি অবৈধ প্রস্তাব।
আসলে বোভের আদেশ সরাসরি ‘কুইড প্রো কুই’ না বললেও, তা স্পষ্টভাবে সেটাই বোঝাচ্ছে। তিনি প্রসিকিউটরদের বলেননি যে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দুর্বল মামলা ছিল। বরং তিনি যুক্তি দেন যে অ্যাডামসের বিচার হলে অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় তার ক্ষমতা ব্যাহত হবে। আরও আশঙ্কাজনক হলো, তিনি মামলাটি স্থায়ীভাবে খারিজ না করে ‘উপাত্ত ছাড়া খারিজ’ (dismissed without prejudice) করার নির্দেশ দেন—যার মানে হচ্ছে, ট্রাম্প যা চান তা না করলে এটি যে কোনো সময় পুনরায় সক্রিয় করা যেতে পারে।
কয়েকদিন পর ‘ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ অনুষ্ঠানে অ্যাডামসের পাশে বসে টম হোমান স্পষ্টভাবে সেই হুমকির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যদি সে আমাদের চুক্তি পূরণ না করে, আমি আবার নিউ ইয়র্ক সিটিতে ফিরে আসব এবং আমরা আর সোফায় বসে থাকব না। আমি তার অফিসে ঢুকে বলব ‘চুক্তিটা কোথায়?’
অর্থাৎ ট্রাম্প ও অ্যাডামস স্পষ্টতই একটি চুক্তি করেছেন: ‘তুমি আমাকে অভিবাসীদের দমন করতে সাহায্য করো, আমি তোমার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে চুপ করিয়ে দেব।’
সৌভাগ্যক্রমে, সাসুন ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এই নোংরা চুক্তিতে সায় দেননি। তবে বার্তাটি স্পষ্ট ট্রাম্পের ‘বিচার বিভাগের অস্ত্রায়ন’ ও ‘রাজনৈতিকীকরণ’ ইতোমধ্যেই জোরেশোরে শুরু হয়ে গেছে।
ছাবেদ সাথী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি, লেখক ও সাংবাদিক। সম্পাদক-বাংলা প্রেস
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম