ছাবেদ সাথী
মার্কিন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জেরাল্ডো রিভেরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কিয়েভের নেতা যেন হোয়াইট হাউজে পা রেখেই ‘একটি ফাঁদের’ মধ্যে পড়েন।
শুক্রবার রিভেরা নিউজ ন্যাশনে তার উপস্থিতিতে বলেন,’আমি যা দেখলাম, তা দেখে আমি হতভম্ব। এটি ট্রাম্পের সবচেয়ে বাজে দিক। ট্রাম্প যেন এক দুর্ব্যবহারকারী বুলির মতো আচরণ করলেন, যিনি একজন যুদ্ধবীরকে অপমান করছেন। এটি কোনো স্বাভাবিক ফটো-সেশন ছিল না, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত ফাঁদ’।
টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রিভেরা নিউজ ন্যাশনের উপস্থাপক কনেল ম্যাকশেনকে বলেন, ‘তারা জেলেনস্কিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল, যেখানে তাকে প্রকাশ্যে অপমান করা যায়। এই পরিকল্পনায় ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভূমিকা কী ছিল, সেটাও ভাববার বিষয়, এক অভদ্র নবাগত, যে সুযোগ পেলেই মন্তব্য করছে। আসলে তার এখানে থাকার দরকার কী ছিল? কেন ট্রাম্প তাকে এই ফটো-সেশনে দরকার মনে করলেন?’
কিয়েভ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে শুরু হলেও দ্রুত তা চিৎকার-চেঁচামেচি ও আঙুল তোলার লড়াইয়ে পরিণত হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল হোয়াইট হাউজ ছেড়ে চলে যায় এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।
ট্রাম্প ও ভ্যান্স দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি এবং তার মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক অবস্থান বা প্রভাবও নেই।
এরপর জেলেনস্কি ভ্যান্সকে চ্যালেঞ্জ করে জানতে চান, কিভাবে তিনি মনে করেন যে ক্রেমলিনের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি সম্ভব? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ইউক্রেনে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছেন এবং আগের অস্ত্রবিরতির প্রতিশ্রুতি থেকেও সরে এসেছেন।
ভ্যান্স জেলেনস্কিকে বলেন, তিনি ওয়াশিংটনে এসে ‘আমেরিকান মিডিয়ার সামনে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করে’ অসম্মানজনক আচরণ করছেন।
শুক্রবার ভ্যান্স বলেন, আপনারা এখন সাধারণ নাগরিকদের জোর করে ফ্রন্টলাইনে পাঠাচ্ছেন কারণ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আপনাদের উচিত প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দেওয়া, তিনি এই সংঘাত শেষ করার চেষ্টা করছেন।
ইউক্রেনের যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রে এখনো অনুভূত হয়নি, তবে ভবিষ্যতে তা পরিবর্তিত হতে পারে বলে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সকে জানান।
ট্রাম্প জবাব দেন, ‘আপনি আমাদের বলার অবস্থানে নেই যে আমরা কী অনুভব করবো কারণ এটি নির্ধারণ করার অধিকার আপনার নেই। আমরা খুব ভালো এবং শক্তিশালী অনুভব করবো। আর আপনি এখন খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই।’
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া ইউক্রেনের হাতে কোনো শক্তি নেই। আমাদের সঙ্গে থাকলে, আপনার হাতে কার্ড (কৌশলগত সুবিধা) আসবে’। ট্রাম্প বলেন এবং সতর্ক করে দেন, জেলেনস্কি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন। ‘আপনি বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং আপনি যা করছেন তা এই দেশের প্রতি অত্যন্ত অসম্মানজনক যে দেশ আপনাকে অনেক বেশি সমর্থন দিয়েছে, যতটা অনেকেই ভাবেনি’।
রিভেরা বলেন, ভ্যান্সের আচরণ ‘প্রায় নাটকীয়ভাবে পরিকল্পিত’ মনে হয়েছে এবং তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ঝগড়া-ঝাটির কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
রিভেরা বলেন,আমি মনে করি, মানুষ মরবে। এই বিপর্যয়ের কারণে মানুষ মরবে, কারণ প্রয়োজনীয় সাহায্য আর যথাযথভাবে আসবে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র নাটক ছিল না। এটি ছিল বাস্তব নীতির প্রতিফলন। আমি বিশ্বাস করি, পুরো বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং তারা জেলেনস্কিকে ছোট দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়েই গিয়েছিল’
রিভেরা ২০২৪ সালের ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেন ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি রুশ সেনাবাহিনীর মনোবল আরও বাড়িয়ে দেবে।
তিনি বলেন, আমি কিন্তু আরও বেশি উদ্বিগ্ন ইউক্রেনে, বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে, যেখানে আমি মনে করি এই বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সেনারা আরও সাহসী হবে, ইউক্রেনের সেনারা মনে করবে, তাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ তাদের ফেলে দিয়েছে।’
পরে ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কি এখনো রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য প্রস্তুত নন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অসম্মান’ করেছেন এবং তিনি তখনই আবার হোয়াইট হাউজে আসতে পারবেন, যখন তিনি শান্তি চুক্তির জন্য প্রস্তুত হবেন।
জেলেনস্কি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ইউক্রেন ‘ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির’ জন্য কাজ করছে এবং সেই লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে।
ছাবেদ সাথী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি, লেখক ও সাংবাদিক। সম্পাদক-বাংলা প্রেস
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম