আবু সাবেত: শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, ইরানের মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা ছিল “ব্যাপক সাফল্য”। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তেহরান যদি একটি গ্রহণযোগ্য শান্তি চুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে আরও হামলা চালানো হতে পারে।
হোয়াইট হাউজের ক্রস হল থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাস-সহযোগী রাষ্ট্রের পারমাণবিক হুমকি বন্ধ করা। আজ রাতে আমি বিশ্বকে জানাতে পারি—এই হামলা ছিল একটি ব্যতিক্রমধর্মী সামরিক সাফল্য।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশাল’-এ পোস্ট করে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ফোরদো, নাটানজ এবং ইসফাহান—এই তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার সময় তাঁর পাশে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শনিবারের হামলা হতে পারে ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য একাধিক অভিযানের সূচনা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ এখন পরিষ্কার।
প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্য দিয়েছেন হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমের প্রবেশদ্বার থেকে—সেই একই জায়গা থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওসামা বিন লাদেন হত্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, এই অবস্থা চলতে পারে না। হয় শান্তি আসবে, না হলে ইরানের জন্য এমন এক বিপর্যয় আসবে যা গত আট দিনের চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে। মনে রাখবেন, অনেক টার্গেট এখনো বাকি। আজ রাতের লক্ষ্যবস্তু ছিল সবচেয়ে কঠিন এবং সম্ভবত সবচেয়ে বিধ্বংসী। তবে যদি শান্তি দ্রুত না আসে, তাহলে আমরা পরবর্তী লক্ষ্যগুলোতে আঘাত করব নিখুঁত পরিকল্পনা, গতি এবং দক্ষতা নিয়ে।
এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি মূল পারমাণবিক স্থাপনায় — ফোরদো, নাটানজ এবং ইসফাহান — সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। বিশেষভাবে ফোরদো স্থাপনায় “সম্পূর্ণ বোমা বোঝাই হামলা” চালানো হয় এবং সব বিমান নিরাপদে ইরানের আকাশসীমা ত্যাগ করে ফিরে গেছে বলে তিনি জানান।
“আমাদের মহান আমেরিকান যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন অভিযান চালাতে পারত না। এখনই শান্তির সময়,” ট্রাম্প লেখেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভূগর্ভস্থ ফোরদো এবং বৃহত্তর নাটানজ প্লান্ট ইরানের দুই প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেগুলোর মধ্যে নাটানজকে এর আগেই ইসরায়েল হালকা অস্ত্র দিয়ে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। তৃতীয় লক্ষ্যবস্তু ইসফাহানের নিকটবর্তী একটি স্থাপনায় ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এই অভিযানে মার্কিন বি-২ স্টেলথ বোমার বিমান ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার রাতেই মিসৌরির হোয়াইটম্যান এয়ার ফোর্স ঘাঁটি থেকে একাধিক বি-২ বোমার বিমান পশ্চিমমুখী যাত্রা শুরু করে, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ও গুয়ামের দিকে যেতে দেখা গেছে।
বি-২ বোমারগুলো ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বাংকার বাস্টার বা ম্যাসিভ বিশাল অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বহনে সক্ষম, যা ফোরদোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে সক্ষম একমাত্র অস্ত্র বলে মনে করা হয়।
উল্লেখ্য, এই সংঘাত ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১৩ জুন শুরু হয়। ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ চালিয়ে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা করে। এর জবাবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ চালিয়ে ইসরায়েলের জ্বালানি কেন্দ্র ও জেট জ্বালানির উৎপাদন স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে।
এই হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়ল। এখন আন্তর্জাতিক দৃষ্টিও ঘুরে গেছে ট্রাম্পের ভাষণের দিকে, যেখানে তিনি ভবিষ্যতের কূটনৈতিক বা সামরিক পদক্ষেপের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম