বাংলাপ্রেস ডেস্ক: ছবির নাম ‘এসওএস কলকাতা’। বাজেট প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সঙ্গে মিমি-নুসরত-যশের মতো মাল্টি স্টারকাস্ট। প্রযোজনায় অভিনেত্রী এনা সাহা। উইকিপিডিয়া বলছে এনার বয়স মোটে পঁচিশ। এই বয়সেই এতগুলো টাকা কী করে পেলেন তিনি? ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত প্রথম সারির অভিনেত্রী নন, বয়সও অল্প। টলিউডের অন্দরে কান পাতলে হালফিলে এনা এবং এনার টাকা নিয়ে হাজারও গুঞ্জন, ফিসফাস। কেউ বলছেন, নিজের পৈতৃক বাড়ি বেচে দিয়েছেন এনা। আবার কারও বক্তব্য সম্প্রতি এনার একটি প্রেমিক জুটেছে। বড়লোক প্রেমিক, সুন্দরী প্রেমিকার রূপে মোহিত হয়ে মন-প্রাণ-টাকা সব নাকি ঢেলে দিয়েছেন তাঁকে খুশি করার জন্য। চাপা গলায় অনেকের প্রশ্ন এখনই প্রযোজক হওয়ার কী দরকার ছিল তার? এনা কী বলছেন?
হাসিমাখা আদুরে গলায় আনন্দবাজার ডিজিটালকে এনা বললেন, “উফফ, সারা দিন যা যাচ্ছে। এত টাইট শিডিউল। আমাদের তো সারা রাত ধরে কাজ হচ্ছে।” এনা পার্লারে যাচ্ছিলেন। ব্যস্ত শুটের ফাঁকে একটু সময় পেয়েছেন। চুলে শ্যাম্পু করবেন। আবার ফিরে এসেই শুট। ছবিতে প্রযোজনা ছাড়াও অভিনয়ও করছেন তিনি। এত কম বয়সে হঠাৎ প্রযোজক হওয়ার ‘ভূত’ চাপল যে? প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই এনার উত্তর, “লকডাউন চলাকালীনই বুঝতে পারছিলাম কাজের সংখ্যা কমবে। নিজেরটা নিজেকেই বুঝতে হবে এ বার। মা বলত, এমন একটা কিছু করতে যাতে অনেক গুলো পেটের খাবার জোগাতে পারি। এত দিন কী করে সেটা হবে মাথাতেই আসছিল না। তবে প্রযোজক হওয়ার ইচ্ছে কার না থাকে! ওই লকডাউনেই মাথায় প্ল্যানটা খেলে গেল। আর তার পরেই সবার সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল কোনওমতে”, হাসলেন এনা।
“পৈতৃক বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছেন তবে?’’ দু’সেকেন্ড থম মেরে গেলেন অভিনেত্রী। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে এনার স্পষ্ট জবাব, “অনেক পুরনো বাড়ি আমাদের। অনেকেই জানেন না, আমাদের কিন্তু জয়েন্ট ফ্যামিলি। সবাই এক সঙ্গে একই বাড়িতে থাকি আমরা। এসে দেখে যান, সন্তোষপুরে ওই বাড়িতেই সব আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে এনা সাহা এখনও রয়েছেন।” গলার স্বরে অসন্তোষ স্পষ্ট। গুঞ্জন যে তাঁর কানেও এসেছে তা বোঝা গেল সহজেই। এনা বলে চললেন, “মা একটা কথা বলে জানেন, দেখবি যখন তোকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তার মানে জীবনে সত্যিই তুই ভাল কিছু করছিস। আরে বাবা, আমার পরিবারে শুধু আমি মা-বাবা আর আমার বোনেরা নয়। একটা বিশাল পরিবার আমাদের। বৈকুণ্ঠ সাহা রোড যেখানে আমি থাকি, সেই রাস্তাটাই আমার দাদুর নামে। বিশ্বাস করুন, বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই নেই আমার। আর তা ছাড়া বাড়ি বিক্রি করে দিলে ওই মানুষগুলো, আমি আমার পরিবার কোথায় থাকব?”
তা হলে এতগুলো টাকা কোথায় পেলেন তিনি? ছোট থেকেই যদিও ইন্ডাস্ট্রির অংশ এনা, কিন্তু তা বলে এতগুলো টাকা কামানোর মতো কাজ কি তিনি এখন পর্যন্ত করেছেন? এনা নিজেই মুখ খুললেন এ ব্যাপারে। পরিষ্কার বললেন, “না, না আমি এত টাকা এখনও কামাইনি যে একাই একটা বিগ-বাজেট ছবির প্রযোজক হয়ে যাব। বাড়ির লোকেরা সাহায্য করেছেন যথাসাধ্য। শুধু বাবা-মা’ই নন। আমার পরিবারের অন্যান্য মানুষেরা নিজেদের সাধ্যমতো আমার স্বপ্নকে সত্যি করতে এগিয়ে এসেছেন।” গলায় উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ছে এনার। তাঁর স্বপ্নপূরণের আর মাত্র কয়েক ধাপ বাকি। ইতিমধ্যেই জোর কদমে শুটিং চলছে ছবিটির। এই ছবি দিয়ে লকডাউন পরবর্তী সময়ে শুটে ফিরেছেন নুসরত জাহান, যশ। মিমি যদিও নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি মিউজিক ভিডিয়ো বানিয়েছিলেন। তবে ফুল ফ্লেজেড ছবি বলতে এটিই। ফ্লোরে মিমি-নুসরতের সঙ্গে এনার সম্পর্ক ঠিক কী রকম। “ওরা তো দিদির মতো। এই তো নুসরত দিদি সে দিন আমায় একটা বেলজিয়াম চকলেট গিফট করল। আর মিমি দিদির সঙ্গে আগেও ‘বোঝে না …’ তে কাজ করেছি। দু’জনেই এত প্যাম্পার করে আমায়…” বলছিলেন এনা। কিন্তু এত বড় স্টার কাস্ট, তাঁদের সুপারস্টারের মতো আদবকায়দার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারার ভয় করেনি প্রথমটায়? এনার নাকি ছোট থেকেই টেনশন ব্যাপারটা একটু কম হয়। বললেন, “আমি তো জানতামই ওরা আমার থেকে অনেক বড় অভিনেত্রী। তাই ওদের সব কিছুই অনেক গ্র্যান্ড, অনেক বড়। সেই প্রস্তুতি নিয়েই তো নেমেছি।” বোঝা গেল, বয়স অল্প হলে কী হবে, প্রযোজক সুলভ আদবকায়দায় ইতিমধ্যেই বেশ ভালই চোস্ত হয়ে উঠেছেন এনা।
আইপডে কথা বলতেই বলতেই তাঁর শ্যাম্পু ডান। আবার শুটে ফিরবেন তিনি। অনেক কাজ বাকি এখনও। এমনিতেই নির্ধারিত দিনের বেশ কিছু পরে শুটিং শুরু হয়েছে। তবে আরেকটা বিষয়ও বাজারে ঘুরছে এনার, সেই ‘প্রেমিক’-এর কথা? যিনি নাকি বাড়ি কিনতে এসে এনার রূপে মুগ্ধ হয়ে নেপথ্যে টাকা ঢালছেন এনার ছবির জন্য? এ বার আর রাগলেন না এনা । বরং হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি। বললেন, “জানি না এ সব কারা রটায়। কী ভাবেই বা রটে। মায়ের কথাই ঠিক মনে হচ্ছে। নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছি বলেই বোধহয় এত আলোচনা, এত গসিপ।”
কে বলেছে এনার জীবনে প্রেম নেই? প্রেম আছে বলেই তো এনা আজ এত খুশি। কাজ করার এনার্জিই বেড়ে গিয়েছে তার”, লাজুক হেসে বললেন অভিনেত্রী। তার মানে এনা কমিটেড? কবে থেকে? কে সে? আবারও হাল্কা হাসলেন তিনি। চাপা চাপা গলায় বললেন, “নামটা জিজ্ঞাসা করবেন না প্লিজ। এই তো এক বছর হতে যাচ্ছে। চিনতাম আগে থেকেই। তবে সে ইন্ডাস্ট্রির কেউ নয়। একেবারে বাইরের।”
আলাপচারিতা শেষ হল। প্রেম, কাজ, ব্যস্ততা নিয়ে এনা আবার ডুব দিলেন ‘এসওএস কলকাতা’-য়।
বিপি।আর এল