নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর শিবপুরে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক পার্ক প্রকল্পের মাঠ ভরাটের বালু ফেলার ঠিকাধারী নিয়ে দ্বন্দ্বে চাঞ্চল্যকর জসিম হত্যা মামলার হুকুমে আসামী মোর্শেদ ভূঁইয়া (৬২) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা। গত বুধবার ৯ ফেব্রুয়ারি ভোর প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ঘাসিদিয়া এলাকা তার বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মোর্শেদ ভূঁইয়া ঘাসিদিয়া গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। গ্রেফতারের পর সকালে পিবিআই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা খায়রুল বাশার তদন্তের স্বার্থে মোর্শেদ ভূঁইয়াকে জেল হাজতে পাঠানোর জন্য আদালতের কাছে লিখিত আবেদন জানান।
লিখিত আবেদনে জানা যায়, শিবপুর উপজেলার ঘাসিদিয়া এলাকায় ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক পার্কের বালু ভরাটে ঠিকাদারী নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীর দ্বন্ধ শুরু হয়। পরে কাবিল মিয়া টেন্ডারে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক পার্কের বালু ভরাটের কাজ পায়। তার এই কাজ পাওয়ার পর প্রতিপক্ষ মোর্শেদ ভূঁইয়াসহ অন্যান্যরা কাবিল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত বছর (২০২১) ২৭ মার্চ সকাল ৯টার দিকে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক পার্কের পশ্চিমাংশে বালু ফেলার সময় হঠাৎ করেই কয়েকজন নারীসহ ৮/১০ জন ব্যক্তি দেশিয় অস্ত্র-সস্ত্রসহ প্রকল্প এলাকায় ঢুকে পড়েন। ওই সময় ভেতরে প্রবেশ করা বালু ফেলতে নিষেধ করে। এ সময় ঠিকাদারের পক্ষে কাবিল মিয়ার ভাই রমজান মিয়া ও ছেলে জসিম মিয়া এগিয়ে এসে বালু ফেলায় বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের সাথে আগত ব্যক্তিদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আগত কয়েকজন নারী অকথ্য ভাষায় জসিমকে গালমন্দ করতে থাকে এবং মোর্শেদ ভূঁইয়া তাকে মেরে ফেলার হুকুম দেন। হুকুম পেয়ে শিবপুরের কোদালিয়া গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে ওসমান মিয়া (৪৫)’র হাতে থাকা ছুরি দিয়ে জসিমের পেটে ছুরিকাঘাত করে, পরে তার ভাই কামাল মিয়া (৩৬) জসিমের মৃত্যু নিশ্চিত করতে সেও তার পেটে পূণরায় ছুরিকাঘাত করে।
অপর দিকে ওসমান মিয়ার ছেলে দৌলত মিয়া (২০) তার হাতে ছুরি দিয়ে পর পর ৩ বার ছুরিকাঘাতে জসিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাজুল ইসলামের ছেলে মাইন উদ্দিন (১৯) তার হাতে থাকা লাটি দিয়ে তাকে ৩/৪ টি আঘাত করে।
এদিকে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ ও জসিমের মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে তারা ১০/১২টি বালুভর্তি ড্রামট্রাকের কাঁচ ভাঙচুর করে চলে যায়। ড্রামট্রাকের কাঁচ ভাঙচুরের ফলে প্রায় ঠিকাদারী কোম্পানীর মালিক কাবিল মিয়ার প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়।
এদিকে আগত হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর জসিমের চাচা রমজান মিয়া ও ভাই তাজুলসহ কর্মরত শ্রমিকরা ছুটে এসে জসিমকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি দেখে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেরণ করে। জসিমকে ঢাকা মেডিকেল নেওয়ার পথে তার অবস্থা আরও খারাপ হলে কোন উপায় না দেখে নিকটস্থ বসুদ্ধরা এভার কেয়ার (এপোলো) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় ওই দিন (শনিবার) দুপুরে চারজনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮ জনকে আসামী করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের চাচা রমজান মিয়া। চার আসামী হলেন, শিবপুরের কোদালিয়া গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে ওসমান মিয়া (৪৫) ও কামাল মিয়া (৩৬), ওসমান মিয়ার ছেলে দৌলত মিয়া (২০) এবং তাজুল ইসলামের ছেলে মাইন উদ্দিন (১৯)। থানায় মামলার দায়েরের পরই প্রধান আসামী ওসমান মিয়াকে গ্রেফতারর করে থানা পুলিশ।
এদিকে নিহত জসিমে বাবা কাবিল মিয়া বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবপুর সিআর আমলী আদালততে পৃথক ভাবে আসামী শিবপুর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের মৃত ফজলু মিয়া ছেলে ১) মো: ওসমান মিয়া (৪৫) ও ২) কামাল মিয়া (৩৬), এবং ওসমান মিয়ার ছেলে ৩) দৌলত (২০), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মাইন উদ্দিন (১৯), ঘাসিদিয়া গ্রামের ফজলু ভেন্ডারের ছেলে ৫)মোরশেদ ভূঁইয়া(৫০), কোদালিয়া গ্রামের কামাল মাহমুদের স্ত্রী ৬) তাছলিমা (২৮), তাজুল ইসলামের স্ত্রী ৭) মোসলেমা (৪০), এবং ওসমান মিয়ার স্ত্রী ৮। নিপা বেগম (৩৮), বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সিআর মামলা নং ৫১০/২০২১ তারিখ- ২৯ জুন- ২১ ধারা ৩০২/৩৪/১৪৯/১৪৩/৩২৪/৩২৬/৪২৭ পেনাল কোড সূত্রোন্ত মামলার সাথে সংযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও মামলার তদন্ত কাজের তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় আদালতের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে পুলিশ হেড কোয়াটার মামলাটির তদন্ত ভার গত ১ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে পিবিআই, নরসিংদীকে দায়িত্বভার দেন।
পিবিআই নরসিংদী মামলা দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত কাজে মনোনিবেশ করে। বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা খোঁজখবরের ভিত্তিতে গত ৯ ফেব্রুয়ারী কাবিল মিয়ার দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত ৫ নং আসামী ও মামলার হুকুমের আসামী মোর্শেদ ভূইয়াকে গ্রেফতার করে।
এই মামলায় ১ নং আসামীকে হত্যাকান্ডের পর পর গ্রেফতার করে শিবপুর থানা পুলিশ। ২,৩ ও ৪ নং আত্মসমর্পন করে এবং ৪ নং জামিন রয়েছে বলে জান যায়। এবং ৫ নং আসামী ৯ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়। পরে সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে বিপিআই নরসিংদী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা খায়রুল পাশা মোর্শেদ ভূঁইয়ার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃত মোর্শেদ এই হত্যা মামলার হুকুমের আসামী। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণে নির্দেশ দেয়।
বিপি/কেজে