মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: বৃহস্পতিবার সন্ধা সাড়ে ৭টা। রাজশাহী নগরীতে আব্দুর রশিদ চানাচুর ফ্যাক্টরীর গেটে উপস্থিত দুই সাংবাদিক। তারা গেটে বাড়ি দিচ্ছে। ফ্যাক্টরীর মালিক আব্দুর রশিদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে জানতে চান বাবা আপনারা কারা? উত্তরে দুই যুবক জানায়, আমরা সাংবাদিক। আমাদের কাছে তথ্য আছে এই চানাচুর ফ্যাক্টরী অবৈধ। তাই আমারা ভেতরে ঢুকবো ছবি তুলবো এবং আপনার নামে নিউজ করবো।
ফ্যাক্টরীর মালিক আব্দুর রশিদ বলেন , বাবা আপনারা দিনে আসেন। আপনাদের প্রয়োজনীয় সকল কাগজ দেখাবো। কিন্তু সাংবাদিক নাছোড় বান্দা। তারা জোর করে প্রবেশ করেন ফ্যাক্টরীর ভেতেরে। দুমদাম ছবি তোলেন। এরপর ফ্যাক্টরীর মালিকের ছেলে মোঃ আতিউল্লাহ বাড়ির ভেতর থেকে হৈচৈ শুনে বাইরে আসেন।
জানতে চান ভাই কি হয়েছে। তারা পরিচয় দেন আমরা সাংবাদিক। আপনি একটু সাইডে আসেন আলাপ করি। সাইডে ডেকে মালিকের ছেলেকে সাংবাদিক পরিচয় দানকারী বকতিয়ার শাহারিয়া লিয়ন বলেন আমি জিবিসি চ্যানেলের অফিস স্টাফ। আর অপর জন রনি আহম্মেদ বলেন, আমি দৈনিক জনতার বাংলা পত্রিকার সাংবাদিক।
এরপর তারা বলেন, আমরা আপনাদের ফ্যক্টরী নিয়ে নিউজ করলে আপনাদের ফ্যক্টরী বন্ধ হয়ে যাবে। মামলাও হবে আপনার বাবার নামে। তাই আমাদের যদি ৫০ হাজার টাকা দেন তাহলে আমরা কোন নিউজ করবো না। কিন্তু টাকা না দিলে সমস্যা আছে।
এভাবেই পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলেন, চানাচুর ফ্যক্টরীর মালিক আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ আতিউল্লাহ।
ঘটনাটি ঘটে রাজশাহী নগরীর কাটাখালি থানার কাপাসিয়া গ্রামের অবস্থিত আব্দুর রশিদ চানাচুর ফ্যাক্টরীতে। পরে খবর পেয়ে ফ্যক্টরীর মালিকের জামাই সেখানে যান।
বিষয়টি কাটাখালি থানার ওসি মোঃ সিদ্দিকুর রহমানকে মুঠো ফোনে অবগত করেন। সাথে সাথে ওসির নির্দেশে ঘটনস্থলে পৌঁছায় এএসআই জয়নাল ও সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স। পরে ফ্যক্টরীর মালিকের জামাই ওই দুই যুবকের সাথে কথা বলে জানতে পারেন তারা সাংবাদিক তাই আপোষ মিমাংসার লক্ষ্যে কাটাখালি থানার ওসিকে পূণরায় ফোন দিয়ে পুলিশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন তিনি। সাথে সথে পুলিশ প্রত্যাহার করে নেন ওসি।
ততক্ষনে ৫০/৬০জন স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হন।
সাংবাদিক পরিচয় দানকারি দুই চাঁদাবাজকে শুরু করেন নতুন ভাবে প্রশ্ন পর্ব। ওই সময় মহাসড়ক দিয়ে র্যাব-৫, এর, একটি টহল দল যাচ্ছিলেন। মানুষের ভিড় দেখে তারা তাদের পিকআপ ভ্যানটি থামিয়ে ঘটনাস্থলে নেমে আসেন। তাদের দক্ষতা ও বিচক্ষনতা দিয়ে দুই কথিত সাংবাদিককে প্রশ্ন শুরু করেন। দেখতে চান তাদের (আইডি কার্ড) পরিচয় পত্র ।
সাংবাদিক পরিচয় দানকারী বকতিয়ার শাহারিয়া লিয়নের কাছে জানতে চান, কোন পত্রিকার সাংবাদিক ? উত্তরে তিনি জানান জিবিসি চ্যানেলের অফিস স্টাফ। জিবিসি এটা কি!
উত্তরে আইপি চ্যানেল। সরকারী অনুমোদন আছে ? নাই। পড়াশোনা কতদুর ৮ম শ্রেণী পাশ। এরপর অপর জন রনি আহম্মেদ বলেন, আমি দৈনিক জনতার বাংলা পত্রিকার সাংবাদিক। পড়া শোনা ? ৮র্ম শ্রেণী পাশ।
রাজশাহীতে পেপার কোথায় পাওয়া যায় ? উত্তরে তিনি বলেন, কার্ড ঢাকা থেকে কিনেছি রাজশাহীতে পত্রিকা আসে না। কার্ডে দেখা যায় তার আইডি’র মেয়াদ শেষ। তার আইডিতে উ।েরখ রয়েছে শাহমখদুম থানা প্রতিনিধি। (অথচো গেছে কাাঁখালি থানা এলাকায়)।
৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাইলেন কেন ? আর রাতে কেন এই প্রতিষ্ঠানে এসেছেন? এমন প্রশ্নের কোন উত্তরে তারা বলেন, আমরা সাংবাদিক যে কোন সময় যে কোন স্থানে যেতে পারি। (মানে সুপ্রিম পাওয়ার)।
র্যাব, এখানে কে পাঠিয়েছে? আমাদের সম্পাদক রকি স্যার পাঠিয়েছেন।
এরপর র্যাব জানতে চান ফ্যাক্টরীর মালিকের কাছে এত মানুষ কেন ? উত্তরে তিনি উপরোক্ত কথাগুলির বর্ননা করেন। পরিশেষে গুনধর ৮র্ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়–য়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারি দুই ভুয়া সাংবাদিককে হাতকড়া পারান র্যাব। সেই সাথে ফ্যাকক্টরীর মালিককে জিজ্ঞাসা করেন কোনো অভিযোগ দিবে কি? অতিষ্ঠ ফ্যাক্টরীর মালিক বলেন মামলা করবো। তাই তাকেও সাথে নিয়ে পিকআপ ভ্যানে তুলে র্যাব-৫, অফিসে রওনা দেন ব্যাবের ওই টহল দলটি।
এদিকে, উপস্থিত জনতা বলেন, জমিতে, দোকানে, হাটে বাজারে কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আর চিট বাটফারী কার্ড বানিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছো বখাটেরা। তাও আবার ৮ম শ্রেণী পাশ। তারা অরও বলেন, আগে সাংবাদিক দেখা যেত না। এখন রাস্তায় বেরুলে সাংবাদিক গায়ের সাথে বাড়ি খায়। এই জাতের সংখ্যা ব্যপক বেড়েছে। তদন্ত করে এদের মতো ভুঁইফোড় সাংবাদিককের এবং হাতে বাজারে, বিস্কুট, চানাচুর ফ্যাক্টরী, ইটভাটা, পুকুর খনন, সাংবাদিক পরিচয়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সহ যারা পত্রিকায় কাজ করেনা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা। সেই সাথে র্যাবকে ধন্যবাদ জানান দুই ফাঁপড়বাজকে গ্রেফতারের জন্য।
বিপি> আর এল